মুখোশধারীদের নৃশংসতায় নারীসহ তিন বাউল আহত : সাধুভক্ত নিখোঁজ

Bulu

এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগরের একতারপুর গ্রামে লালন অনুসারী বাউল আশ্রমে আবারও হামলার ঘটনা ঘটেছে। একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে আশ্রমের সাধুভক্ত দু’নারীসহ ৩ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আহতরা হলেন- ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের স্ত্রী রশিদা বেগম, কুষ্টিয়ার মীরপুর উপজেলার স্বরুপদহ গ্রামের আব্দুর রহিম ও তার স্ত্রী বুলু বেগম। গত পরশু শনিবার রাত সাড়ে ১১টার এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদেরকে রাতেই জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রশিদা বেগমের অবস্থার অবনতি হলে গতকাল রোববার সকালে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এছাড়া আশ্রমের সাধুভক্ত বক্স মণ্ডল ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। খবর পেয়ে গতকাল সকাল ১০টার দিকে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়নি।

আশ্রমের সাধু গুরু মুকুল হোসেন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আশ্রমের সাধু গুরু মুকুল হোসেনের পিতা শহিদুল হক সম্প্রতি আশ্রমের জন্য ৫ শতক জমি দান করেন। ওই জমির ওপর আশ্রমঘর নির্মাণের জন্য মুকুল শনিবার রাতে তার ভক্তদেরকে ডাকেন। এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে সাধু ভক্তরা এসে আলোচনা শেষে ওই আশ্রমেই ঘুমিয়ে ছিলেন। আশ্রমটি গ্রামের পাশে এক আমবাগানে অবস্থিত। ওই দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে ১০-১২ জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আশ্রমে ঢুকে হামলা চালায়। তারা সাধু ভক্তদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটায়। এসময় তাদের চিৎকারে গ্রামবাসী ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসী মুমূর্ষু অবস্থায় রশিদা বেগম (৬০), আব্দুর রহিম (৬৫) ও তার স্ত্রী বুলু বেগমকে (৫০) উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহত রশিদা বেগমের অবস্থার অবনতি হলে গতকাল রোববার সকালে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এছাড়া এ ঘটনার পর থেকে আশ্রমের অপর এক সাধুভক্ত ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর গ্রামের বক্স মন্ডল (৫০) নিখোঁজ রয়েছেন।

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনিছুর রহমান জানান, আহত রশিদার গলায় ও মুখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে এবং আব্দুর রহিম ও বুলু বেগমকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। এছাড়া বুলু বেগমের ডান পা ভেঙে গেছে। সবারই অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে বেলা সাড়ে ৫টার দিকে ওই আশ্রমে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ সময় আমিনুল হক নামে এক প্রতিবেশী জানান, মাঝে মাঝেই ওই আশ্রমে সাধুসংঘ বসতো। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং ৩ জনকে আহত অবস্থায় দেখতে পান। তবে কারা এবং কী কারণে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমরা জানি না বলে জানান আমিনুল হক।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বাউল পরিষদের সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু বলেন, লালন অনুসারী বাউল আশ্রমে হামলার ঘটনা জঘন্যতম। যারা এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, আশ্রমে নারীদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলো। সে কারনেই হামলা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে এ হামলায় কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে আরও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, এ ঘটনার ৬ মাস আগেও ওই আশ্রমে দৃর্বৃত্তদের হামলায় সাধু গুরু মুকুল হোসেনসহ ৩/৪ জন ভক্ত গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এছাড়া দেড় বছর আগে ওই আশ্রমের ২ কিলোমিটার দূরে শিয়ালমারী গ্রামে অপর একটি আশ্রমেও হামলার ঘটনা ঘটে। ওরশ চলাকালীন মধ্যরাতে ১৫-১৬ জন দৃর্বৃত্ত আশ্রমে ঢুকে ৭-৮ জন ভক্তকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।