মনজুর আলম: ঝিনাইদহের হাটবাজারে চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসিনতার কারণে চিকিৎসা সেবার মান বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। চা দোকানি, ভ্রাম্যমাণ কাপড় ব্যবসায়ী, ইলেকট্রনিক মেকানি এমনকি ভ্যান চালকও রাতারাতি পেশাবদল করে নামিদামি চিকিৎসক সেজে বসেছে। চিকিৎসা সেবার নামে চলছে রমরমা বানিজ্য। ঝিনাইদহের বিভিন্ন হাটবাজরের খোঁজ খবর নিয়ে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া বাজারের রেডিও মেকানিক আব্দুল হান্নান এখন বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তিনি তার নামের আগে পরে বিভিন্ন পদপদবি বসিয়ে নামীদামি চিকিৎসক সেজে বয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, আব্দুল হান্নান নামের জনৈক ব্যক্তি বছর ছয়েক আগে বাজারে দোকান ভাড়া নিয়ে রেশমা ইলেকট্রনিক নামের প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। এখন দেখছি হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে জটিল রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। আর চিকিৎসার নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে আব্দুল হান্নান ইলেটট্রনিক মিস্ত্রিকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা দিতে দেখে হতবাক হচ্ছেন বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীগণ।
তবে আব্দুল হান্নান জানান, তিনি নিজে রোগী দেখেন না, কম্পিউটারের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করেন এবং ওষুধ দেন। তিনি রোগীদের সাথে কোনো প্রতারণা করছেন না বলে দাবি করেন।
একই উপজেলার ফেরি করে কাপড় বিক্রেতা সোহেল রানা এখন বিশেষজ্ঞ দন্ত চিকিৎসক। নিজের নামের আগে পরে নানা টাইটেল বসিয়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে এক প্রকার প্রতারণা করে যাচ্ছেন। দন্ত চিকিৎসক সোহেল রানা জানান, তার কাগজপত্র নেই ঠিক তবে তার ভালো প্রশিক্ষণ আছে। তার চিকিৎসা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আর তিনি নতুন করে চিকিৎসা দিচ্ছে। তার কাছ থেকে কেউ অপচিকিৎসার শিকার হয়নি বলে তিনি জানান।
ঝিনাইদহ জেলা শহরের পাগলাকানাই সড়কের চা’ দোকানি আক্তার হোসন নামের জনৈক ব্যক্তি এখন নামীদামি চিকিৎসক সেজে বসেছেন। তিনি ডায়াগোনেষ্টিক সেন্টার খুলে বীরদর্পে চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন। প্রশাসনের নাকের ডোগায় চিকিৎসার নামে প্রতারণায় হতবাক হয়েছে সচেতন মহল। তবে আক্তার হোসেন জানান, এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তারই বড় ভাই আকমল হোসেন। তিনি ময়মানসিং এ প্রশিক্ষণে আছেন। তাই আমি প্রতিষ্ঠানে বসে মাঝে মধ্যে সম্ভব হলে রোগীদের পরমর্শ দিয়ে থাকি। কোনো চিকিৎসা রোগীদের দেন না বলে তিনি জানান।
ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর স্ট্যান্ডের ভ্যানচালক জনৈক আব্দুস সোবাহান এখন নামীদামি চিকিৎসক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুস সোবহান ভ্যান-রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নরে সাবেক সভাপতি। তিনি স্ট্যান্ডের একটি ক্লিনিকে পাহাদার পদে চাকরি নেন। সেই সুবাদে রোগ ও ওষুধ সম্পর্কে ধারনা আসে। ক্লিনিকটিতে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা হতে থাকলে প্রশাসন ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেন। সুযোগ বুঝে তিনি বলুহর স্ট্যান্ডে একটি ফার্মেসি খুলে নামীদামি ডাক্তার সেজে বসেছেন। তিনি রোগীদের চিকিৎসা এবং মেডিসিন দেদারছে বিক্রি করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান।