চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস :
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বলেছেন ‘গড়াইটুপির মেলায় কোনো ধরনের অশ্লীলতা ও জুয়া হবে না। আমরা এ ধরনের বিষয়ে অনুমতি দিইনি। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস এসব কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, ইউএনওরা একেকদিন একেক মসজিদে নামাজ পড়বেন এবং সেখানে দেশ বা সরকার বিরোধী কোনো বক্তব্য দেয়া হচ্ছে কি-না তা দেখবেন। জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন। বিআরটিএ’র মাধ্যমে জনগণ খুবই হয়রানি হচ্ছে। ব্যাংকের বুথ স্থাপন ও টাকা জমা নেয়ার বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানকে লিখিত জানানো হবে। যদি দ্রুত সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে বিআরটিএ অফিসের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধে পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কাস্টমস কমমূল্যে গরু বিক্রি করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুল কলেজে আসছে কি-না সে ব্যাপারে শিক্ষকরা জেলা শিক্ষাকর্মকর্তার মাধ্যমে অবগত করবেন। অভিভাবকরাও খোঁজ নেবেন, তাদের সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে।
জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস আরও বলেন, গড়াইটুপির মেলার বিষয়ে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার এমপি ও আলী আজগার টগর এমপি মহোদয়ের পরামর্শক্রমে পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করি। ৪০ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দরদাতাকে মেলার ইজারা দেয়া হয়। সেই সাথে ইজারাদারকে আরও ভ্যাট হিসেবে ৮ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। অথচ, গতবছর মেলাটি ১৩ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছিলো।
জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, গড়ুইটুপি মেলাকে আমরা মধু মেলার মতো দেখতে চাই। ঐতিহ্যবাহী মেলা হিসেবেই দেখতে চাই। মেলার নামে অশ্লীলতাকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেলায় অশ্লীলতার ভেতর দিয়ে যাতে জঙ্গি ঢুকে পড়তে না পারে সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। এখন থেকে শো রুমে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করেই মোটরসাইকেল বিক্রি করতে হবে। যেসব দোকানদা এসব মানবেন না, তাদেরকে মোবাইলকোর্টের আওতায় এনে দণ্ড দিতে হবে। জীবননগর ও দামুড়হুদায় সংঘবদ্ধ ডাকাতদলকে ধরার পর সেখানে ডাকাতি বন্ধ হয়ে গেছে। আলমডাঙ্গার সাবেক ওসি ডাকাতি বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নতুন ওসি চেষ্টা করছেন। শিগগিরই চক্রের সদস্যরা ধরা পড়বে। অবৈধ চার চাকার গাড়ির যাত্রীবহন প্রতিরোধ ও অবৈধভাবে পেট্রোল বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় সভায় বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক মেজর মুইন বলেন, প্রতিদিনই মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়। বিপুল পরিমাণ মাদক ধরা পড়ে। তবে, কাস্টমসের ওয়্যার হাউসে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিজিবি ওয়্যারহাউসে তা সংরক্ষণ করে। পরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ধ্বংস করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ গড়াইটুপি মেলা প্রসঙ্গে বলেন, গত বছর আমার কাছেও নানাজন নানান অভিযোগ করেন। অশ্লীলতার কারণে জঙ্গিরা উৎসাহিত হয়। এ জাতীয় অশ্লীলতা হতে দেয়া যাবে না। গড়াইটুপি আমাদের জেলার ঐতিহ্য। যাত্রা ও সার্কাস বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। এ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কিছু হলে তা হতে দেয়া যাবে না।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপরিচালক জাফর ইকবাল, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. শামশুজ্জোহা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজ, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাদ জাহান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোজাম্মেল হক, দর্শনা কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট মোস্তফা কামাল চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. আব্দুল মালেক, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতন, শিক্ষক-অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব, চুয়ডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজাদ মালিতা, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম মইনুদ্দিন মুক্তা, জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন।
সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ইমামদের নিয়ে আগামী ১৮ জুলাই চুয়াডাঙ্গা শ্রীমন্ত টাউনহলে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের নিয়ে জঙ্গিবিরোধী অনুরূপ সমাবেশ করার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতি অনুরোধ করছি।’
জেলা শিক্ষা অফিসার আজাহার আলী জানান, ইউএনও সাহেবদের সাথে পরামর্শক্রমে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদেরকে মাঠে নামানো হয়েছে। শিক্ষা অফিসের ১২ কর্মকর্তার প্রত্যেককে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনটি করে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং সমাবেশ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন তদারকির পাশাপাশি শিক্ষকরা জঙ্গি বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন কি-না তা তদারকি করবেন।
প্রথম আলোর সাংবাদিক শাহ আলম সনি জানান, শহর ও গ্রামীণ রাস্তার দুইপাশে ঝোঁপঝাড় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এগুলোর ভেতরে কেউ ঘাপটি মেরে বসে থেকে অপরাধ সংঘটিত করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে। তাই, ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এই বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোজাম্মেল হক বলেন, ‘ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার খুবই প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদ বিভিন্ন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে এসব পরিষ্কার করতে পারে। সভায় উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তা জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ ও জেলার সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন।