দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকানন

 

শেখ সফি: ঈদোত্তর বিনোদনের জন্য হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননে। আম্রকাননের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে ঈদের ছুটিতে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় খুশি তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে কেউ যাতে কোনো নাশকতা করতে না পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ঈদের ছুটি উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকাননে। ঈদের দিন বিকেল থেকে বিনোদন প্রত্যাশীদের ভিড় শুরু হয়। বৃষ্টিও বাঁধ সাধাতে পারেনি ভ্রমণপিয়াসু মানুষকে।  সকাল হলেই বিভিন্ন জেলা থেকে বাস-ট্রাক, শ্যালোইঞ্জিনচালিত নসিমন, করিমন, আলগামন ও মোটরসাইকেলযোগে আসতে থাকেন দর্শনার্থীরা। কেউবা এসেছেন প্রিয়জনের সাথে একান্তে গল্প করেও সময় কাটাতে। লাউডস্পিকারে বাজা গান ও মিউজিকের মাধ্যমে নেচে গেয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আবার কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে। কঁচিকাচা শিশুরা মুগ্ধ ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখে। কমেপ্লক্সে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্রে ভিড় যেন বেড়েই চলেছে। মানচিত্রে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের ১১টি সেক্টরের যুদ্ধ চিত্র পৃথক করে দেখানো হয়েছে। রয়েছে একাত্তরের বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ স্থানে তৈরি স্মৃতিসৌধ। তাই শুধু ঘুরে বেড়ানো নয় স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরে বেজায় খুশি দর্শনার্থীরা। এমনটাই জানালেন চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা দর্শনার্থী কলেজ ছাত্রী শিল্পি আক্তার।

ঈদে দেশের কয়েকটি স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও এখানে নির্বঘ্নে এসে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী। পাশাপাশি ইতিহাসও জানতে পারছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। তবে পর্যাপ্ত টয়লেট, বিশুদ্ধ পানি, ভলো মানের রেস্ট হাউজ না মৃদ অসন্তোষ দেখা গেছে।

পাবনার বেড়া থেকে আসা এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, দেশের অন্য দর্শনীয় স্থানের চেয়ে মুজিবনগর ভিন্ন। এখানে শুধু বেড়ানো নয় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা যায়। যা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন। কিন্তু বিশাল বাগানে হেঁটে ক্লান্ত দর্শনার্থীদের বিশ্রাম কিংবা বসার কোনো স্থান নেই। এছাড়াও টয়লেটের সীমাবদ্ধতা বেশ ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটিতে দর্শনার্থীদের জন্য আরো উপযুক্ত করে গড়ে তোলার দাবি জানান বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী।

তবে দর্শনার্থীরা যাতে নিবিঘ্নে চলাচল ও বেড়াতে পারে সে লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান মুজিবনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল হোসেন। কমপ্লেক্সের প্রবেশ দ্বারে চেকপোস্ট ও টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি শাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশের একাধিক দল।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগর আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছিলেন। মুজিবনগর হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী। মুজিবনগরে শথপ গ্রহণ করা সরকারের অধীনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকহানাদার মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। এ কারণে দর্শনার্থীদের কাছে আম্রকানটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত।