তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না

 

শঙ্কা এখন সর্বত্রে। হামলার পর হামলা। গুলশানের রেস্তোরাঁয় নৃশংসতার পর ঈদের দিনেও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগা ময়দানে হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারীদের পরিচয় উন্মোচনের পর দেশের তরুণ প্রজন্ম নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন সকল অভিভাবক। সন্তান যদি ওই জঙ্গিদের খপ্পরে পড়ে! কিংবা আমার সন্তান তার সহপাঠীর তলোয়ারে কাটা পড়বে না তো!

জঙ্গি সংগঠনগুলো বরাবর শিক্ষিত তরুণদের দলে ভেড়ানোর জন্য অনলাইনকে ব্যবহার করে আসছে। তাদের আদর্শসংবলিত বিভিন্ন লিফলেট, নিবন্ধ পাঠিয়ে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে। রোমান্টিসিজম বা হেরোইজমে আকৃষ্ট করা হয়। অনলাইনে তারা যা পাঠায় সবই ইংরেজিতে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য তা পড়া ও বোঝা সহজ। তারা তা পড়ে এবং কখনও কখনও তাতে আকৃষ্ট হয়। হতাশ ও কম ধর্মপ্রাণ তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে আইএস এভাবেই সদস্য সংগ্রহ করছে। আইএস এমন সব তরুণকে টার্গেট করে যারা জীবন নিয়ে খুবই হতাশ কিংবা যারা ইসলাম সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে না। তাদের দলে টানা এবং আইএস’র মতবাদ মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া অনেক সহজ বলে মনে করা হয়। অনেক কোচিঙের মাধ্যমেও ওই ভুলপথে আকৃষ্ট করা হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বিদায় হজের ভাষণে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা) মানব জাতির উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না।’ অথচ আজ আমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখছি। এই দেশ চিরকালই ছিলো পরধর্মসহিষ্ণু ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মানুষের দেশ। লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন- তোমার জন্য তোমার ধর্ম, আমার জন্য আমার- পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের এই বাণীকে শিরোধার্য করেছিলো এদেশের মানুষ। অথচ ধর্মের নামে হামলা চালিয়ে ধর্মকেই খাটো করা হচ্ছে। যার আড়ালে রয়েছে ভুল ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যা। একটি সমাজ একদিনে উগ্র হয়ে ওঠে না। ধীরে ধীরে তার ভেতরে উগ্রতা আরোপিত হয়। ইতোমধ্যে বেশ কজন নিখোঁজ শিক্ষিত তরুণের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে তারা প্রশিক্ষন নিয়ে জঙ্গি হামলা চালাতে পারে। গুলশান হত্যাকাণ্ডের পর নানা মতবাদ শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে- পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতাশাগ্রস্ত তরুণরা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে। শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের কথাও বলা হচ্ছে। এত সরলীকরণ করা কি ঠিক? না।

দেশের শিক্ষিত তরুণ, যারা অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তান, তারা কেন জঙ্গিবাদের শিকার হয়ে নিজেদের জীবন তুচ্ছ করছে- তার জবাব পেতে হলে সমাজের হৃৎপিণ্ডে আমাদের কান পাততে হবে। গভীর পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ ও গবেষণা প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে আমাদের জঙ্গি জন্মরোধ করতেই হবে। অভিভাবকদের সচেত হতে হবে। ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান দিয়েই রুখতে হবে উগ্রতা, ধর্মান্ধতা।