সেবার ব্রত নিয়োজিতদের সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেক

 

প্রসূতির শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয় তখনই যখন, প্রসূতি ও তার জঠোরে থাকা সন্তানের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। দিন দিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করার হার বেড়েছে। কমেছে নবজাতক ও প্রসূতির অপমৃত্যুর হারও। এরপরও মাঝে মাঝে যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো- মা-শিশুর জীবন বিপন্ন থেকে রক্ষা করতেই যখন ছুরি-কাঁচির ব্যবহার তখন প্রসূতির মৃত্যু হয় কেন? তাহলে কি কোথাও কোনো ত্রুটি থেকে যাচ্ছে?

সর্বক্ষেত্রে ত্রুটি ও দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি না থাকলেও চিকিৎসার নামে ক্লিনিক নাসিং হোমগুলোর অধিকাংশের চিত্র ভয়াবহ। যেখানে সেখানে গড়ে তোলা বাণিজ্যিক স্বাস্থ্যসেবাগুলোর অধিকাংশেই অপচিকিৎসার কারণে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এইতো সেদিন জীবননগরের একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করার পর নবজাতকের মৃত্যু হলো। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় বেসরকারি একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করা প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একের পর এক এ ধরনের অপমৃত্যুর পরও কি স্বাস্থ্য প্রশাসনের তরফে ন্যূনতম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জবাব নেতিবাচক। ফলে ওইসব বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্রগুলো থেকে ইতিবাচক কিছু পাওয়ার তেমন আশা করাও অমূলক। অবশ্যই দেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ অধিকার নিশ্চিত করতে শুধু রাজধানী বা বিভাগীয় শহরেই শুধু নয় সরকারিভাবে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ওষুধ পথ্যও সরবরাহ করা হয়। এরপরও নানা অনিয়ম, অপ্রতুলতার কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রত্যাশিত চিকিৎসা মেলে না। অনেক ক্ষেত্রেই হয়রানির শিকার হতে হয়। সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলক হাসপাতাল কম্পাউন্ডেই অবস্থান করার কথা, থাকে কি? চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট কোথায় থাকেন? তাছাড়া প্রসূতির প্রসববেদনা কখন দেখা দেয়, কখন জটিল হয়ে পড়ে প্রসূতির পরিস্থিতি তা বোঝা ভার। সে কারণেই প্রসূতির চিকিৎসার জন্য অনেকেই ঝুঁকে পড়েন হাসপাতালের আশপাশে গড়ে তোলা বেসরকারি ক্লিনিক, নাসিং হোম বা বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আর সুযোগ বুঝে শুধু কাড়ি কাড়ি অর্থই হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে না, প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ছাড়াই দেদারছে চালানো হচ্ছে ছুরি-কাঁচি। স্বজন হারানোদের আহাজারি স্বাস্থ্য প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্তাকে এতোটুকু কর্তব্যপরায়ণ করছে বলে তো মনে হয় না।

বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অনিয়ম রুখতে অবশ্যই দরকার স্বাস্থ্য প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা। মাঠ পর্যায়ে তেমন জবাবদিহিতা নেই বলেই অনিয়ম যে রন্ধ্রে রন্ধে বাসা বেঁধেছে তা বলার অবকাশ রাখে না। তাছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোতে মান সম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলে বেসরকারিগুলোর সেবার মান আকর্ষণীয় হতে বাধ্য। সেবার ব্রত নিয়ে যারা মহান পেশায় নিয়োজিত তাদের সমাজের ওপর দায়বদ্ধতা অনেক।