মুগ্ধ এলাকাবাসী : চোখে তার বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: ফুটবল মাথায় নিয়ে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে মোটরসাইকেলযোগে দামুড়হুদা বাজারে পৌঁছেই চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর নানা ক্রীড়াশৈলী দেখাতে শুরু করলেন এক অচেনা যুবক। দামুড়হুদার চৌরাস্তা থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দু ধারে উৎসুক জনতা দু চোখ ভরে উপভোগ করছে যুবকের নানা ক্রীড়াশৈলী। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়কের দু ধারে পথচারীদের ভিড় দেখে দাঁড়াতেই চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর দেখা মিললো ওই যুবকের। এরপর মোটরসাইকেল থামিয়ে মাথায় বল নিয়ে শুরু করলেন দোকানে দোকানে নাজরানা আদায়। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম ওই যুবকের কাছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই বললেন ফুটবল মানব মাসুদ রানা। বাড়ি জিজ্ঞেস করতেই বললেন স্যার একটু দাঁড়ান কয়েকটি দোকানে কালেকশন শেষে কথা বলছি। কালেকশন শেষে দামুড়হুদার পূর্বাশা কাউন্টারের সামনে খোকনের চায়ের দোকানে বসে জানা গেলো কিছু কথা। নাম মাসুদ রানা (২৭)। বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বরুনা গ্রামে। এরপর তিনি মাথায় বল নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে গেলেন দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের দিকে। পিছু নেয়া হলো তার। উপজেলায় ঢুকে মাথায় ফুটবল নিয়ে উঠে গেলেন বড় একটি নারকেল গাছে। গাছ থেকে নেমে আবারও মোটরসাইকেল স্ট্রার্ট দিয়ে মাথায় একটি, দু হাতে দুটি এবং পায়ে একটি মোট চারটি ফুটবল নিয়ে চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর কখনও দু হাত ছেড়ে, কখনও মোটরসাইকেলের ওপর শুয়ে আবার কখনও দাঁড়িয়ে এভাবে প্রায় ২০ মিনিট ধরে দেখাতে শুরু করলেন নান্দনিক নৈপুণ্য। তার খেলা দেখে মুগ্ধ উপস্থিত লোকজন বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত। রেজাউল হক ও শহিদুল ইসলাম এ দু ইউপি সদস্য উপস্থিত লোকজনের নিকট থেকে প্রায় ৪শ টাকার মতো সংগ্রহ করে তুলে দিলেন তার হাতে। দু ঘণ্টায় প্রায় ৩ হাজার টাকা কালেকশন হয়েছে বলে জানান মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ১৯ বছর ধরে এভাবেই চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর ফুটবল মাথায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখিয়ে বেড়ায় নানা ক্রীড়াশৈলী। আর এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। লেখাপড়া কতদূর বলতেই এক গাল হেসে বললেন ওখানেই আমার বড় ঘাটতি। নইলে কী আর রাস্তায় রাস্তায় খেলা দেখাতে হয়? অভাব অনটনের সংসারে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডিটাই পেরুনো হয়নি তার। তবে টুকটাক ইংরেজি বলতে পারেন তিনি। কী কী খেলা শিখেছো জানতে চাইলে এক নাগাড়ে বলে চললো মাথায় বল নিয়ে পানিতে সাঁতার কাটার পাশাপাশি নারকেল গাছে ওঠা এবং চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর ৭টি বল নিয়ে খেলা দেখাতে পারি। এক টানা ৩২ ঘণ্টা পর্যন্ত মাথায় বল রাখা সম্ভব বলেও জানান তিনি। দামুড়হুদায় কেন? জানতে চাইলে তিনি জানান মেহেরপুরে যেতে হবে। তাই যাওয়ার পথে লোকজনকে একটু আনন্দ দিচ্ছি এই আর কি। মাসুদ রানা নিজেকে বাফুফের সদস্য দাবি করে আরও জানান, আবাহনী, মোহামেডান, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন ক্লাবে তার ফুটবল খেলার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু খেলায় তার যতোটা না মনোনিবেশ তার চেয়ে বেশি চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর ফুটবল মাথায় নিয়ে ক্রীড়াশৈলী দেখানো। মাসুদ রানা জানান, যখন ফুটবল খেলতাম তখন আমাকে তেমন কেউই চিনতো না। আর এখন সারাবিশ্ব আমাকে চেনে। কিভাবে জানতে চাইলে মাসুদ রানা জানান, কিছুদিন আগে আমাকে নিয়ে ঢাকা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এ রকমই একটি প্রোগ্রাম করেছে টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশন। আমার ক্রীড়াশৈলী বাংলাভিশনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। এছাড়া আমি ওয়াল্টন কোম্পানির প্রচার করে থাকি। ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে সকলের ছোট দু সন্তানের জনক মাসুদ রানা বলেন, এভাবেই খেলা দেখাতে দেখাতে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া হয়ে বেশ কয়েকটি জেলা ঘুরে ঈদের দু দিন আগে বাড়ি ফিরবো। চোখে একটাই স্বপ্ন আমার, এই আলাদা প্রতিভা দিয়ে আমি একদিন পৃথিবী জয় করবো। বাংলাদেশকে তুলে ধরবো বিশ্বের দরবারে।