প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যদিয়ে প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত ঝিনাইদহের ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। আগামী ২৮ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৭টি ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর নির্বাচনে জয়লাভ করতে নিজ নিজ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা রাত-দিন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা দিচ্ছেন ভুরি-ভুরি প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়নের আশ্বাস। ভোটাররাও সুযোগ বুঝে তাদের গ্রামের সমস্যাগুলো বার বার তুলে ধরছেন প্রার্থীদের কাছে।

জেলা নির্বাচন অফিসসূত্রে জানা গেছে, ৫ম তফসিল অনুযায়ী ঝিনাইদহ সদর উপজেলা ৭টি এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১টিসহ মোট ৮টি ইউনিয়নে ২৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে মোট ৩৪ জন, মেম্বার পদে ৩৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে পুরুষ সদস্য সংখ্যা ২৬৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৭৩ জন নারী ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী করছেন। এখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৯ হাজার ৮৯৩ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৯৫১ জন। আগামী ২৮ মে ৬৯টি কেন্দ্রে এ সকল ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

তবে নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্বে বিএনপি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নানা ধরনের হুমকিধামকি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে বিদ্রোহী আ.লীগ প্রার্থী আবার কোনো কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করছে। আর এই দ্বন্দ্বে খেসারত দিতে হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীর বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হুমকিধামকি অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মাধ্যমে চলছে ঝিনাইদহের নির্বাচনের কার্যক্রম। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অন্য প্রার্থীদের হুমকিধামকি দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল ওহাব বিশ্বাস জানান, তার কর্মীরা ভোটের পোস্টার লাগাতে গেলে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর নেতাকর্মীরা বাধা সৃষ্টি করছে। এমনকি তার নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। তার নেতাকর্মীরা আতঙ্কে ভোটারদের নিকট ভোট চাইতে যেতে পারছেন না। একই ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী ইজ্জত আলী মাস্টার একই ধরনের অভিযোগ করে বলেন, তার নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি জানান।

তবে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ তারিফুল ইসলাম জানান, নির্বাচনের কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ মৌখিকভাবে পেয়ে আমি স্থানীয়ভাবে আপস মীমাংসা করে দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক আছে। কোনো প্রকার বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া মহারাজপুর ইউনিয়নের বিএপির প্রার্থী খুরশিদ আলমকে এলাকা ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। অপরদিকে সাগান্না ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী আলাউদ্দিনের ধানের শীষের পোস্টার ছেড়ার অভিযোগ উঠেছে। সে সময় নেতাকর্মীদের মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাথকুণ্ডু গ্রামে দু গ্রুপে উত্তেজনা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে ওই এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এছাড়া সাধুহাটি ইউনিয়নের স্বতন্ত্রপ্রার্থী নাজির উদ্দিনের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা ধরনের হুমকিধামকি এবং ভোটের মাঠে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে মধুহাটি ইউনিয়নের নৌকায় আগুন দেয়াকে কেন্দ্র করে মামলার ঘটনায় ব্যপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী তুহিন আক্তার বলেন, দু প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আর পরস্পর বিরোধপূর্ণ বক্তব্য অথচ নৌকায় আগুন দিয়ার ঘটনায় আমার নেতাকর্মীর নামে মামলা করে হয়রানি দিয়ে আমাকে ভোটের মাঠ ছাড়া করা হচ্ছে। এটা চরম দুঃখের। তিনি ঘটনাটি প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ৫ম ধাপে ঝিনাইদহে ৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন ২৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্তিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, বিজিবি, ৱ্যাব, স্টাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে।