হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার চিরচেনা হালচাষ

 

আহাদ আলী মোল্লা: গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত ও চাষিদের নিত্যদিনের সঙ্গী ছিলো লাঙল। লাঙল ছাড়া এক সময় চাষাবাদ হতো না। তবে কালের আবর্তে হাজার বছরের পুরনো সেই লাঙল হারিয়ে যেতে বসেছে। যন্ত্র চালিত লাঙলের যুগে গরু বা মোষের টানা লাঙল আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের তেতুল মণ্ডলের ছেলে কৃষক নির্মল মণ্ডল। তিনি গত সোমবার বাঘাডাঙ্গার মাঠে গরু দিয়ে হালচাষ করছিলেন। নির্মল মণ্ডল জানালেন, এ তল্লাটে মাত্র আর দুজন গরুর লাঙল ব্যবহার করছেন। অন্য সব চাষি পাউয়ারটিলার ও ট্রাক্টর চালিত লাঙল দিয়ে চাষবাস করেন।

চুয়াডাঙ্গার গ্রামীণ জনপদে বছর বিশেক আগেও গরু-মোষ ও ঘোড়া ছিলো সাধারণ মানুষের বাহনের একমাত্র মাধ্যম। সোয়ারী আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো ছই গাড়ি। বিয়ে শাদীর সময় ছইগাড়িতে বরযাত্রীরা বরকে নিয়ে কনের বাড়িতে যেতো। বউ ঝিয়েদের স্বামী বা বাপের বাড়ি যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিলো গরু-মোষ বা ঘোড়ার গাড়ি। এসব গাড়িতে করে শহর থেকে মালামাল আনা-নেয়া হতো গ্রামাঞ্চলে। মাঠের ফসল আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে তারাই ছিলো একমাত্র ভরসা। তাছাড়া শস্য মাড়াই বা মলন মলার জন্য গরু-মোষের বিকল্প ছিলো না। কিন্তু কালের আবর্তে বদলে গেছে মানুষের জীবন। আধুনিকতা আমাদেরকে নিয়ে এসেছে যান্ত্রিক যুগে। এখন গরু-মোষ বা ঘোড়ায় টানা গাড়ি তেমন চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না মাঠে মাঠে লাঙল, বিদে বা মই দেয়ার দৃশ্য। লাঙল তৈরির মিস্ত্রিরাও পেশা বদলে ফেলেছেন। আগে দেখা যেতো নতুন গরু-মোষ মাঠে গাড়ি বা লাঙল জুড়ে নাংলা করা হতো। এখন অনেক কৃষকের ঘরেই হয়তো গরু পাওয়া যাবে; কিন্তু নাংলা গরুর ভারি অভাব। নাংলা গরু মানে গাড়ি বা লাঙল টানার অভ্যস্থ করু। গরু নাংলা না হলে যদি তার ঘাড়ে গাড়ির জোঁয়াল তুলে দেয়া হয়, তা নির্ঘাত খাঁদে পড়বে। যা হোক লাঙল বওয়া গরুর এখন খুব অভাব। ফলে দু-এক বছরের মধ্যেই মাঠ থেকে কৃষকের লাঙল চিরতরে হারিয়ে যাবে। ফুরিয়ে যাবে লাঙল বওয়ার প্রয়োজনও। চিরচেনা লাঙলের কারিগরও এলাকায় আর নেই। এখনই স্কুল-কলেজের অনেক ছেলে-মেয়ে কোনোদিন লাঙল দেখেনি বলে মন্তব্য করে থাকে। তাহলে আর বছর দশেক পরে লাঙল দেখতে হয়তো জাদুঘরে যেতে হবে। তাতে হয়তো লাঙল দেখা যাবে। কিন্তু মনের খেদ মিটবে না। মানে চাষিরা কিভাবে মাঠে লাঙল বইতো তা দেখা যাবে না।