মুজিবনগরের সেই শিক্ষিকার আর্তি : আমি নষ্টা নই ধর্ষিতা

 

মুজিবনগর  প্রতিনিধি: ‘সাংবাদিক ভাই, আমি কোনো নষ্টা মেয়ে নই, আমি এক ধর্ষিতা মেয়ে, আমি ছোট বেলা থেকে ছিলাম মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। আমার কোনো ভাই নেই, আমার বাবা একজ কৃষক মানুষ। আমি জীবনে কোনো দিন কোনো সময় পাপ করিনি। আমার ইচ্ছে সাধনা ছিলো লেখাপড়া শেষ করে একটি ভালো চাকরি করবো। কিন্তু পরিবারের অভাবের কারণে পড়াশুনার পাশাপাশি স্কুলে শিক্ষিকার পেশাটি বেছে নিয়েছিলাম। পিতার মতোই সম্মান করতাম প্রধান শিক্ষককে। প্রতিষ্ঠান প্রধান তো ওই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর অভিভাবক ও পিতার সমতুল্য। কখনো ভাবিনি আমার অভিভাবক আমাকে ভোগের পণ্য হিসেবে দেখে। বুঝতে পারিনি তার সুপ্ত লালসা। ক্ষণিকের মধ্যে ওই নরপশু আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমার জীবনের স্বপ্নকে অথৈ সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে। একজন নিষ্পাপ অবলা মেয়েকে বানিয়েছে কলঙ্কিনী। আমি ওই নরপশু প্রধান শিক্ষকের সর্বোচ্চ বিচার চাই। আপনার পত্রিকায় মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি। ওই নরপশু প্রধান শিক্ষক আর কোনো মেয়ের জীবন যাতে নষ্ট করতে না পারে।’ গতকাল শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে উপরোক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেহেরপুর মুজিবনগর আম্রকানন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের দ্বারা ধর্ষিত সেই খণ্ডকালীন শিক্ষিকা।

এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার পিতামাতাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের একই অবস্থা। এ যেন শোকসন্তপ্ত কোনো পরিবার। ওই শিক্ষিকা আরো বলেন, কোনো মেয়ে ধর্ষিতা হলে তারই সম্মান যায়। এটা আমাদের সামাজিক বাস্তবতা। ধর্ষকের তেমন কিছুই যায় আসে না। তার চাপিয়ে দেয়া কলঙ্ক নিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু বেঁচে আছি এবং বাঁচার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। কারণ আমি ওই নরপশুরর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে চাই।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই ওই শিক্ষিকার গ্রামসহ এলাকার মানুষের মাঝে বইছে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড়। একজন প্রধান শিক্ষকের দ্বারা তার অধীনস্ত শিক্ষিকা ধর্ষণ তাই ক্ষোভের আগুন যেন বেড়েই চলেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শরিফুল ইসলাম গ্রেফতার না হচ্ছেন ততক্ষণ প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে বলে জানান ওই গ্রামের কয়েকজন। এদিকে ঘটনার পরদিন দর্শনা ইমিগ্রেশন হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম। তবে তাকে গ্রেফতারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ মেহেরপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মে শুক্রবার কুষ্টিয়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের লালসার শিকার হন ওই বিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষিকা। এ ঘটানায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীদের প্রতিবাদের মুখে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ অভিযুক্ত শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।