টান তিন দিন ধরে সারাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। এই বৃষ্টি, আবার বিরতি। তবে মেঘ একেবারে সরছে না। রোদ উঁকি দেয়ার চেষ্টা করেও কোনো সুবিধা করতে পারছে না। গত কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমের পর এ ধরনের আবহাওয়া জনমনে স্বস্তি বয়ে আনলেও আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রোয়ানু নামের ভয়াবহ আরেকটি দুর্যোগ ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের এ নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে শক্তিশালী রূপ ধারণ করে ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে। এছাড়া সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটের ছোট লঞ্চ (৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘের) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ১৯ মে ২০১৬ তারিখ আবহাওয়া অফিস কর্তৃক এ ধরনের সতর্কবার্তা জারির পর থেকে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডর আক্রান্তদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা রোয়ানু মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার গণামাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।
বিগত কয়েক বছরে সিডর, নার্গিস, রেশমি, আইলা, মহাসেন ও কোমেন নামের কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের ওপর আঘাত হেনেছে। বিশেষ করে সিডর এবং আইলার আঘাত ছিলো মারাত্মক। সে আঘাতের ক্ষত এখনো শুকায়নি। মরসুমের এই সময়টা প্রাকৃতিকভাবেই ঝড়-বৃষ্টি-বাদলের। এই সময়টা যতোটা উপভোগ্য আবার ততোটাই ভয়ের, আতঙ্কের। কারণ প্রকৃতি যেকোনো সময় রুদ্রমূর্তি ধারণের শঙ্কা থাকে এবং তা প্রায়ই জনপদকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এবারো এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমে এক পশলা বৃষ্টি সবার কাঙ্ক্ষিত হলেও ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে এখন সবাই অস্থির। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দফতর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে রোয়ানু।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার উপকূল থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। প্রকৃতি মতিগতি বোঝা যেমন ভার, এর আঘাত ঠেকানোও তেমনি দুঃসাধ্য। ভারি বৃষ্টি হলে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে যেতেও পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দুর্যোগ মোকাবেলায় সব রকম প্রস্তুতি রাখতে হবে যাতে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এই দেশ ও দেশের মানুষকে দ্রুত নিরাপদ ও সুরক্ষা করা যায়। উপকূলবাসীকে শুধু সতর্ক করলেই হবে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের করণীয় সম্পর্কে যেমন সজাগ করে দিতে হবে তেমনি নিরাপত্তার সব রকম ব্যবস্থাও নিতে হবে দ্রুত।