বৈরী আবহাওয়ায় লোকসানের মুখে মেহেরপুরের লিচু চাষিরা

 

মেহেরপুর থেকে মহাসিন আলী: বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর মেহেরপুরে লিচুর ফলন ভালো হয়নি। তাই লোকসানের মুখে পড়েছে এ জেলার লিচু চাষিরা। মাসাধিক প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ে গেছে বাগানের লিচু। দীর্ঘ খরার পর শিলা-বৃষ্টিতে লোকসানের বোঝা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সত্তর থেকে পঁচাত্তর ভাগ লিচু পুড়ে ও শিলার আঘাতে ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঘনঘন সেচ ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে ফলন বিপর্যয়ের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে জেলার লিচু চাষিরা।

চৈত্রের শুরু থেকে মেহেরপুরের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করেছে। বোশেখেও মেলিনি বৃষ্টির দেখা। লিচুর গুটি মোটা হতে শুরু করাকালীন থেকে পাকা পর্যন্ত পুরো সময় বৃষ্টির দেখা মেলেনি। বৃষ্টির অভাবে একদিকে লিচুর সাইজ হয়েছে ছোট, অপরদিকে স্বাদের দিক থেকেও মিষ্টতা হয়েছে কম। বেশির ভাগ লিচুর গায়ে কালো দাগ পড়েছে। দীর্ঘদিন একটানা খরার কারণে বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন গুণছিলো কৃষকেরা। অবশেষে একদিনের শিলা-বৃষ্টিতে প্রাণিকূলে স্বস্তি এনে দিলেও কপাল পুড়েছে লিচু চাষিদের। প্রচণ্ড খরতাপে বাগানের লিচু পুড়ে শুকিয়ে যায়। শুকনো পোড়া লিচুর ওপর শিলা-বৃষ্টির আঘাতে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে গাছের লিচু। ঘনঘন সেচ ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে ফলন বিপর্যয়ের ফলে লোকসানের মুখে পড়েছে জেলার লিচু চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব মতে জেলায় প্রায় ৫৭৯ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে দুই হাজার মেট্রিকটন লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু এখন চারভাগের এক ভাগ ফলন পাওয়ায় দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের লিচুচাষি সাখাওয়াত জানান, তিনি এবার বারাদি হর্টিকালচারের লিচু বাগান কিনেছিলেন। চৈত্র মাস থেকে একইভাবে খরা চলছে। প্রচণ্ড রোদে গাছের লিচু শুকিয়ে পুড়ে যাচ্ছে। সাইজ হয়েছে তুলনামূলক ছোট। স্বাদও হচ্ছে টক। যার কারণে বাইরের জেলা থেকে ফড়ে এসে লিচু পছন্দ করছে না। তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে সত্তর থেকে আশি ভাগ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। যা আছে তা খরিদ্দারে নিতে চাচ্ছে না। প্রতিটা লিচু চাষিকেই মোটা অঙ্কের লোকসান গুণতে হবে। মেহেরপুর শহরের ফুল বাগানপাড়ার লিচু চাষি হাসান, ফোজদারি পাড়ার সামাদ, মণ্ডলপাড়ার জামাল উদ্দীন জানান, ত্রিশ বছর থেকে লিচুর ব্যবসা করছি। এত রোদ আর গরম এর আগে কখনও দেখিনি। রোদের কবলে চার ভাগের তিন ভাগ লিচুই শেষ হয়ে গেছে। এক ভাগ ভাল পাওয়া যাচ্ছে। যারা বাগান কিনেছে তারা এ বছর লোকসান গুণতে গিয়ে পুঁজিহারা হবে।

ফলন বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরুজ্জামান জানান- মরসুমের শুরু থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় দেশি জাতের আটি লিচু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাশাপাশি পাকা অবস্থায় বৃষ্টি হওয়ায় লিচু ফেটে গিয়েছে। তবে চাইনা ও বোম্বাই জাতে লিচু একটু পরে উঠবে। সময়মতো দুইবার বুষ্টিও হয়েছে। নিয়মিত বৃষ্টি না হলে বাগানে ঘনঘন সেচ প্রদান করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।