দর্শনা অফিস: ফরিদপুর, রেইন উইক, মোবারকগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও কেরুজ চিনিকলসহ ফেডারেশনের ১৭ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা ৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের মাঠ ছাড়েননি। লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করেই যেন ঘরে ফিরবেন তারা। সরকারের টনক নড়াতে মানববন্ধন, ফটকসভা, বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসমাবেশ করেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। আন্দোলন কর্মসূচি দেশের এই ৫টি চিনিকলের সমন্বয়ে গঠিত সেক্টর করপোরেশনের নেতৃবৃন্দ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কেরুজ চিনিকলের বীজ অফিস চত্বরে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেক্টর করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খান সিরাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সেক্টর করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন, খোরশেদ আলম, জাহিদুল ইসলাম লতিফ, হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ কেমিকেল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি এম কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল হাদী, বাংলাদেশ চিনিকল ফেডারেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, কুষ্টিয়া রেইনউইক অ্যান্ড যজ্ঞেশ্বরের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তহিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মানু মিয়া, নর্থবেঙ্গল চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রব, মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম নবী, ফরিদপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজল বসু ও দর্শনা আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী।
কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি চিনিকল শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের অবমূল্যায়ন করে কোনো দেশেই উন্নয়ন সম্ভব নয়। শ্রমিক-কর্মচারীরা একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। শ্রমিক বাঁচলে বাঁচবে প্রতিষ্ঠান, উন্নত হবে দেশ। দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি শ্রমিক-কর্মচারীরা আজ অবহেলিত। তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে নামতে হয়েছে রাজপথে। ৬ দফা দাবি আদায়ে শ্রমিকদের আন্দোলন কর্মসূচিতে গোটা দেশ কেঁপে উঠলেও টনক নড়ছে না সরকারের। মাথার ঘাম পায়ে পেলে যারা প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখেন সেই শ্রমিকদের প্রতি আর কোনো অবহেলা বরদাশ্ত করা হবে না। একটি কথা মনে রাখতে হবে, আমরা রাজনৈতিকভাবে যে দলেরই সমর্থক হই না কেন শ্রমিক স্বার্থ আদায়ে সকলকেই এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরবো। কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ফেডারেশনের আইন ও দরকষাকষি বিষয়ক সম্পাদক মাসুদুর রহমানের সার্বিক পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, শ্রমিক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ, রেজাউল ইসলাম, ফারুক আহম্মেদ, জয়নাল আবেদীন, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। শ্রমিক-কর্মচারীদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পেশকৃত প্রস্তাবিত জাতীয় মজুরি স্কেল ২০১৫ ঘোষণা ও বাস্তবায়ন। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ি সংস্থার সদর দফতরের কর্মচারীদের সাথে সংস্থাধীন কারখানাসমূহে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান আর্থিক এবং অন্যান্য বৈষম্য নিরসন করতে হবে। সংস্থাধীন কারখানাসমূহে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও পেনশন বা সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী গ্রাইচ্যুটি নির্ধারণ করতে হবে। কর্মরত নারী শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রসূতি ছুটি ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক-কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা বাড়াতে হবে। কারখানা শ্রমিক-কর্মচারীদের সমন্বয়সহ ল্যাম্প গ্রান্ট সুবিধা দিতে হবে। পরিপত্র প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কর্মচারীদের মতো কারখানা শ্রমিকদের চলতি বছর থেকে নববর্ষের ভাতা দেয়াসহ সমন্বয় সাপেক্ষে বর্তমান আহরিত মজুরির ৫০ ভাগ হারে মজুরি স্কেলের বিপরীতে অগ্রীম প্রদান করতে হবে।