স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিগগিরিই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিবর্তন আসবে তদারকি পর্যায়ে, অর্থাত্ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। যেসব স্কুল এখন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ায়, আপাতত সেগুলো অষ্টম পর্যন্ত শ্রেণি হবে না। সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিও খোলা হবে না। পঞ্চম শ্রেণির বদলে অষ্টম শ্রেণি ধরা হবে প্রাথমিকের সমাপনী কাল। এখনকার মতো প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কি না, থাকলে তা কীভাবে, সে সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় পরে জানাবে।
এ বিষয়ে পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্তগুলো প্রয়োজন হবে সেগুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্থির করবে। কাঠামোটা কেমন হবে, হাই স্কুলগুলো, অষ্টম শ্রেণি চালু হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কী হবে, শিক্ষক সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলোর কী হবে- এ বিষয়গুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে কাজ করবে।
শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এত বড় একটা মৌলিক পরিবর্তন আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে কখনও হয়নি। এটা শিক্ষার ইতিহাসে বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত।
বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত, যা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। শিক্ষার অন্যান্য স্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ সিদ্ধান্তের কারণে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কি না, নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বেতন কোন মন্ত্রণালয় দেবে এসব সিদ্ধান্ত এখনই নয়, ধাপে ধাপে হবে। তিনি বলেন, এ পরিবর্তনের ফলে সার্বিক ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তনের প্রয়োজন আসবে। সেগুলো আমাদের নতুন করে সাজাতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, জাতীয় শিক্ষানীতি আলোকেই আমরা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর ফলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় চলে গেল। আমরা অবিলম্বে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করব। এ জন্য আমরা এ বিষয়ে একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। তিনি কোনো অনুশাসন দিলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।
এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপ্তিকাল পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে আমরা নিয়ে গেলাম। সামান্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাদে সিদ্ধান্তের ব্যাপারটা আজ হয়ে গেল। উত্তরণ পর্বের কাজটি আজ হলো। আসল সিদ্ধান্তটাই আজ নিয়ে নিলাম।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের প্রায় সব ইউনিয়নেই নিম্ন এবং মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা অনেক। কোথাও ৫-৭টাও আছে। সব প্রাইমারিতে যদি হাই স্কুল খোলা হয়, সব হাই স্কুলেই যদি একাদশ দ্বাদশ খোলা হয়, তাহলে বড় ধরনের ম্যাসাকারের মতো ব্যাপার হবে। কোনো ছাত্রই কেউ পাবে না। এসব কিছু মাথায় রেখে সব স্কুলে আর অষ্টম শ্রেণি খোলা যাবে না, দরকারও হবে না। যেখানে যেভাবে আছে, সেভাবেই শিক্ষানীতির আলোকে আমরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়ন করব।
সভায় শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।