জমিজমা সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতার জের ধরে আলমডাঙ্গার বেগুয়ারখালী গ্রামে দু পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

 

উভয়পক্ষে ১১ জন জখম : বাড়িঘরে হামলা-ভাচুর

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: পূর্বশত্রুতার জের ধরে আলমডাঙ্গার বেগুয়ারখাল গ্রামের ২ গ্রুপের মাঝে রক্তক্ষয়ী খণ্ডযুদ্ধে উভয়পক্ষে ১১ জন রক্তাক্ত জখম হয়েছে। আহতদের হারদী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ৪ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। বিবাদমান জমি দখলকে কেন্দ্র করে ওই বর্বোচিত ঘটনার সূত্রপাত।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার বেগুয়ারখাল গ্রামের ১০ বিঘা মাঠের ফসলি জমি নিয়ে বজলু-হায়েত গ্রুপের সাথে একই গ্রামের ডাক্তার শুকুর আলী- কোচিম মণ্ডল পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিলো। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচন সে বিরোধের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। যথারীতি গ্রামের দু পক্ষ দু প্রার্থীর সমর্থন ও কর্মী হিসেবে কাজ করে। এ নিয়ে নির্বাচনোত্তর কয়েকটি গোলযোগেরও সৃষ্টি হয়। ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ওই উত্তেজনার প্রশমন ঘটান।

একাধিক গ্রামবাসী জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধপূর্ণ ১০ বিঘা জমির মধ্যে বর্তমানে ৫০ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। ৫০ শতক জমি বজলু-হায়েত পক্ষ এ যাবত জোরপূর্বক দখলে রেখেছে। প্রায় সপ্তাখানেক পূর্বে হায়েত-বজলুর দখলে থাকা ৫০ শতক জমি কোচিম-ডাক্তার শুকুর আলীরা দখল করে নেন। গতকাল সকালে বজলু-হায়েত পক্ষ পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই ওই জমি পুনরুদ্ধারে যায়। এ সংবাদ পেয়ে তড়িঘড়ি করে কচিম মণ্ডল তার ৩ ছেলসহ ঘটনাস্থলে যান। তাদের পেছনে পেছনে সে পক্ষের আরও কিছু লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এদিকে কচিম মণ্ডল ও তার ৩ ছেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে হায়েত-বজলু গ্রুপের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু করে। ওই সময় পূর্ব থেকে প্রস্তুত হায়েত-বজলু গ্রুপ কচিম মণ্ডল ও তার ছেলেদের ধরে নিয়ে গিয়ে একই গ্রামের মৃত মকছেদ আলীর ছেলে আব্দারের বাড়িতে আটকে বেদম পেটায়। শুধু পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি- ধারালো অস্ত্র দিয়ে কচিম মণ্ডলের ছেলে আসমান, জিনারুল ও আকমানকে কুপিয়ে জখম করে। কচিম মণ্ডলের হাতে ফালা মেরে রক্তাক্ত জখম করা হয়। আসমানের ঘাড়ে, অন্যদের হাতসহ বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে জখম করে। কচিম মণ্ডলদের বাড়িতে আটকে কুপিয়ে মারা হচ্ছে জানতে পেরে কচিম পক্ষের অনেকে আব্দারের বাড়িতে ছুটে গেলে তাদের ওপর  ধারালো অস্ত্র ও ফালা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বজলু-হায়েত-কাসেদ গ্রুপ। এ সময় বজলু-হায়েত কাছেদ গ্রুপের হামলায় কচিম মণ্ডল পক্ষের আরও ৩ জন গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। এরা হলেন- মৃত হেকমত আলীর ছেলে একরামুল, আনারুল ফকিরের ছেলে খোকন ও মৃত নবিসদ্দীনের ছেলে মজিবুল।

বজলু-হায়েত-কাছেদ গ্রুপ বাড়িতে ধরে নিয়ে গিয়ে কচিম মণ্ডল-শুকুর ডাক্তার গ্রুপকে কুপিয়ে মারছে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে পরে শুকুর ডাক্তার-কচিম মণ্ডল গ্রুপ অন্যান্যরা প্রস্তুতি নিয়ে হামলা চালায় বজলু-হায়েত-কাছেদ গ্রুপের ওপর। সে সময় কচিম মণ্ডল-শুকুর ডাক্তার গ্রুপের হামলায় রক্তাক্ত জখম হয় বজলু-হায়েত-কাসেদ গ্রুপের ৪ জন। এরা হলেন- মৃত মুনসুর আলীর ছেলে গ্রুপ প্রধান হায়েত, আয়েন আলীর ছেলে কাসেদ ও মৃত মকছেদ আলীর ২ ছেলে আব্দার ও মতিয়ার হোসেন।

এদিকে আহত সকলকে উদ্ধার করে হারদী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর জখম শুকুর ডাক্তার-কচিম মণ্ডল গ্রুপের আসমান আলী ও জিনারুলকে এবং অপর গ্রুপের হায়েত আলী ও আব্দারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার পরপর শুকুর ডাক্তার-কচিম মণ্ডল গ্রুপ বজলু-হায়েত-কাসেদ গ্রুপের ১০ জনের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বজলু, লাল্টু, আতিয়ার, মতিয়ার, শহিদ, আব্দার, কাসেদ, মাসেম, শফিকুল, আয়েন আলীর বাড়িঘর।

একই গ্রামের জেলহাজতমুক্ত মোজাহারসহ আজিজ হত্যা মামলার কতিপয় আসামি বিশেষ মহলকে উত্তেজিত করে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গ্রামের অনেকেই অভিযোগ তুলেছে।

এ ঘটনা জানতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ বেগুয়ারখাল গ্রামে অবস্থান করে। রাতেও গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে পরে আর কোনো হামলার ঘটনা না ঘটলেও দু গ্রুপের ভেতরে এখন চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।