সীমান্তে একের পর এক হত্যা আর কতোদিন?

সীমান্তের সব হত্যাকাণ্ডকে চোরাচালান সংক্রান্ত বলে চালানো যেমন সমিচীন নয়, তেমনই চোরাচালানকেও ওইভাবে পাখির মতো গুলি করে খুন করাকেও আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিধি সমর্থন করে না। অথচ হরহামেশাই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গুলি করে, পিটিয়ে হত্যা করে। যার অধিকাংশ শিকারই বাংলাদেশি নাগরিক।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নতুনপাড়া সীমান্তে বাংলাদেশি এক স্কুলছাত্রীকে গুলি করে খুন করেছে বিএসএফ। স্কুলছাত্রসহ বেশ কয়েকজন সীমান্ত সংলগ্ন আমবাগানে আমপাড়ার কাজে নিয়োজিত ছিলো। এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। তীব্র প্রতিবাদ জানানোর মধ্যেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেয়া ঠিক হবে না। দ্বিপাক্ষিক তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ দূরের কথা বৃদ্ধি পাওয়ারই সমূহ আশঙ্কা। কেননা বারবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত প্রহরীদের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে দু দেশের সীমান্তে বাংলাদেশ নাগরিক হত্যা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। প্রতিশ্রুতি মিলেছে। বাস্তবায়ন হয়নি। বরঞ্চ ঘট্নার জোর প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে কখনো কখনো বলা হয়, যেহেতু ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে সব সময়ই কার্ফ্যু জারি থাকে, সেহেতু অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে হামলাকারী ধরে নিয়েই গুলি করা হয়। হত্যার জন্য গুলি করা না হলেও কখনো কখনো প্রাণহানি অনিবার্য হয়ে ওঠে। ঢালাও এ উক্তির পর এবার একজন স্কুলছাত্রকে হত্যার বিষয় বিএসএফ কি বলবে? অজুহাত তো আছেই। তাতে তুষ্ঠু না হয়ে সুষ্ঠু তদন্ত কাম্য। তথ্যমতো, নতুনপাড়া সীমান্তে স্কুলছাত্র হত্যার সাথে জড়িত বিএসএফ’র কয়েকজন সদস্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিএসএফ’র পদস্থ কর্মকর্তাদের এ পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে, দোষীদের শুধু দায়িত্ব থেকে নামকাওয়াস্তে অব্যাহতি নয়, ন্যায়বিচার হওয়া দরকার।

চোরাচালান জিয়ে রেখে সীমান্ত সমস্যা সমাধান যেমন প্রায় অসম্ভব, তেমনই বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লে চোরাচালান শূন্যের কোটায় নেয়ার আশাও অবান্তর। তাহলে? সীমান্ত সমস্যা সমাধানে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা।