চুয়াডাঙ্গা কৃষ্ণপুরের মৌসুমী এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও মুখে নেই এতোটুকু হাসি : মেয়ের লেখা পড়া নিয়ে দুশচিন্তায় দিনমুজুর পিতা জহিরুল

 

নজরুল ইসলাম: চরম দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে এসএসসি পরীক্ষায়  জিপিএ-৫ পেয়েছে চুয়াডাঙ্গা কৃষ্ণপুর গ্রামের মৌসুমী খাতুন। মেয়ের ভবীষত লেখাপড়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিনমুজুর পিতা জহিরুল ইসলাম মা আলেয়া বেগম। ফলে কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মৌসুমী জিপিএ-৫’র মতো সোনার হরিন পেয়ে চোখে মুখে আনন্দের ছাপ থাকার কথা থাকলেও তা মলিন হয়ে গেছে। আনন্দের পরিবর্তে পরিবারে এখন শুধুই শঙ্কা।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মোল্লাপাড়ার দিনমুজুর জহিরুল ইসলাম ও আলেয়া বেগমের মেয়ে মৌসুমী খাতুন হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। অভাবের সংসারে ২ ছেলে ও একমাত্র মেয়ে মৌসুমী। ছোট বেলা থেকেই সে পড়াশোনায় বেশ মনোযাগী। মেয়ের লেখাপড়ার আগ্রহের কথা জেনে দিনমুজুর পিতা সংগ্রাম করে মেয়ের লেখাপাড়া চালিয়ে এসেছেন। দিনমুজুর খেটে প্রতিদিন যে আয় রোজগার হতো তাই দিয়ে সংসার চালানো এবং ছেলে মেয়েকে মানুষ করা বর্তমান বাজারমূল্যে চরম কষ্টসাধ্য ছিলো জহিরুলের। ৫ জনের সংসারে অভাব অনটন ছিলো তাদরে নিত্যসঙ্গী। এর মধ্যেই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়েছে তাকে। কখনো বা পরের বই ধার করে পড়তে হয়েছে মৌসুমীকে। পিতার দারিদ্র্যতার কুঠারাঘাতে থামেনি সে। নানা সমস্যার মধ্যেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে মৌসুমী। তাই আনন্দ উৎসবের বদলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে পরিবারটিতে। মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা। তাই ভালো একটি কলেজে ভর্তির জন্য অভাবী বাবা ছুটছেন সবার কাছে। কিন্তু তাতেও তেমন সায় মিলছে না। তাই শঙ্কা এখন মৌসুমীসহ পরিবারটির চোখেমুখে।

মৌসুমীর পিতা জহিরুল ইসলাম বললেন, আমার পড়ানোর সামর্থ নেই। কারণ এ পর্যন্ত দিনমুজুর করে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাতে গিয়ে অবশিষ্ট ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে ফেলেছি। বিক্রি করার মতো তেমন কিছু নেই। মা আলেয়া বেগম বললেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ঠিকমত খাওয়াতে পর্যন্ত পারেনি। ওর ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সাধ্য নেই। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, শত বাঁধা পেরিয়ে সাফল্যের শীর্ষে এসেও মিলিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন। শুধু উচ্চ শিক্ষায় নয়-তার লেখাপড়াও আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তার স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে যাচ্ছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যত এখন তাকে কুড়ে-কুড়ে খাচ্ছে। আগামীতে কিভাবে কলেজে ভর্তি হবে? কোথায় পাবে কলেজে ভর্তির, বই-পুস্তক কেনার টাকা এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

প্রতিবেশীরা জানায়, সুযোগ পেলে মেধাবী মৌসুমী একদিন কিছু একটা হবে এমন প্রত্যাশা আমাদের। সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে দিতে চায়, মেয়েরা সংসারের বোঝা নয়। মেয়েরাও পারে সংসার ও সমাজের পরিবর্তন আনতে। যেখানে দারিদ্র্যতাই তাদের পরিবারের একমাত্র সাথী। লেখাপড়া না জানা মা-বাবা’র সন্তান অদম্য মেধাবী এ নিয়ে আমাদের গর্ব। দারিদ্রতা কী তাহলে অভিশাপ!

হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, মৌসুমী সুযোগ পেলে সমাজের দৃষ্টান্ত হতে পারে। একই সাথে পিছিয়ে পড়া সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে। সমাজের স্বচ্ছল ও হৃদয়বানদের মৌসুমীর পাশে দাড়ানো দরকার।

বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, প্রতিবছর বেগমপুর ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দা জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছেলে মেয়েদের পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়াতা করা হয়ে থাকে। এবছরও তাই করা হবে। অর্থের অভাবে মেধার মূল্যায়ন হবে না তা হতে পারে না। মেধাবীদের পাশে দাড়ানো বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব। আশা করি মৌসুমীর ক্ষেত্রেও তাই হবে।