চুয়াডাঙ্গাসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত

আজকের মধ্যে দাবি দাওয়া পনা হলে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে আন্দোলকারীরা

স্টাফ রিপোর্টার: সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গতকাল রোববার সকাল সকাল ছয়টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের ফলে যাত্রী সাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় পরিবহন শ্রমিকরা শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধ যানও চুয়াডাঙ্গার প্রবেশ দারগুলোতে বাধা দেন।

ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল রোববার সকালে চুয়াডাঙ্গা বাস টার্মিনালে  জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক একেএম মইন উদ্দিন ও জেলা বাস-ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন মণ্ডলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। নেতৃবৃন্দ জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকায় ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট  চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যমকর্মী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হয়। এছাড়া ২০১২ সালের ১১ মে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণ শাসন নামক স্থানে গ্রিন লাইন ও একটি পাথর বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আটজন যাত্রী মারা যায়। দুটি ঘটনায় পৃথকভাবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করা হয়েছে। ওই দুটি মামলা প্রত্যাহারসহ তিনদফা দাবিতে এই ধর্মঘটের আহ্বান করা হয়। ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের পর যদি দাবি পূরণ না হয়, তাহলে দেশব্যাপী লাগাতার ধর্মঘটসহ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

গত ২৭ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কমিটির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম বকস দুদু এই আন্দোলনের ডাক দেন।

     সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডঙ্গা সরোজগঞ্জ সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে গতকাল রোববার সরোজগঞ্জ বাজারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সরোজগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সরোজগঞ্জ শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সরোজগঞ্জ শাখা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক আযুব আলী, সহসভাপতি মোক্তার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান, ক্যাশিয়ার মহর আলী। এছাড়া সরোজগঞ্জ ট্রাক, ট্র্যাঙ্কলরি কাভারভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন, নির্বাহী সদস্য জিয়াউর রহমান, সোনা মিয়া প্রমুখ।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, মোটরশ্রমিকদের ৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আন্দোলনের প্রথমদিন গতকাল রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের পিকেটিং ছিলো চোখে পড়ার মতো। খুলনা বিভাগীয় পরিবহন ধর্মঘট চলাকালে দর্শনায় কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো পরিবহন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মঘটের প্রথম দিন পালন করলেন দর্শনা মোটরশ্রমিক-কর্মচারীরা।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সকাল থেকে মেহেরপুরে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অল্প দূরত্বের গন্তব্যে ইজিবাইকে চলাচল করলেও দুর্ভোগে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। ধর্মঘটের কারণে বাস, ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি, কাভার্ডভ্যানসহ সব যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছে, ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। অনেক যাত্রীকে স্ট্যান্ডে এসে ফিরে যেতেও দেখা গেছে। মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মঘটের সমর্থনকারীরা গণপরিবহনও চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। একটি বিআরটিসি বাস ভাঙচুর করেন শ্রমিকরা।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্মঘট চলাকালে কুষ্টিয়া থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। এছাড়াও স্থানীয়ভাবেও ইঞ্জিনচালিত কোনো অটোরিকশা, সিএনজিও চলাচল করেনি। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে।  তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি ওষুধবাহী পরিবহন এ ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হয়। ধর্মঘট সফল করতে পরিবহন শ্রমিক নেতাকর্মীরা সকাল থেকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে অবস্থান নেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সড়কে ৱ্যাব ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল আলম জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবি মেনে না নিলে দেশব্যাপী আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।