বজ্রপাতে বিশ্বের চারভাগের একভাগ মারা যায় বাংলাদেশে

উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতি বছরই বর্ষার আগে কালবোশেখি ঝড়ের সাথে দেশে বজ্রপাতের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গত কয়েকদিনে বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এতো বজ্রপাত কেনো? কেনোই বা এতো মৃত্যু? এ প্রশ্ন এখন অনেকের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বজ্রপাতে এবারই অতোমূত্যু প্রথম নয়, আগেও মারা গেছে, তখন অতোখবর পাওয়া যেতো না। পক্ষান্তরে অনেকেই বলেছেন, এসব প্রকৃতিরই বৈরি আচরণ। বিগড়ে যাওয়া প্রকৃতির প্রতশোধ।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঋতু পরিবর্তনের সময় বায়ুমণ্ডলে এক ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এ সময়ে বায়ুমণ্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় জলীয় বাষ্প ও মেঘের কনার মধ্যে এক ধরনের ঘর্ষণের ফলে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ওই এলাকার ওপর বজ্রমেঘ সৃষ্টি হতে থাকে। এটি যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন এটি নীচে চলে আসায় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

আবহাওয়া অধিদফতর মনে করে, মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ ঝড় হয়ে থাকে। আর জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণেই বজ্রপাতে এখন বাংলাদেশে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, পৃথিবীর অন্যসব দেশের তুলনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশেই বেশি। বিশ্বের বজ্রপাতে মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ ঘটে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি ইনস্টিটিউটের ২০১০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে বজ্রপাতের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে হতাহতের ঘটনা এড়ানো যায়। দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলেছেন, বড় গাছের অভাব বজ্রপাতে মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে ঘরবাড়ি বেশি হলেও সেখানে বজ্রনিরোধক থাকায় বজ্রপাতের ঘটনা কম। কিন্তু গ্রামের এই নিরোধক হিসেবে কাজ করতো যে বড় গাছ, তার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। আর এতেই বাড়ছে প্রাণহানি। এছাড়া গ্রামে খোলা জায়গা থাকায় বজ্রপাত বেশি হচ্ছে।

বিলুপ্ত সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সুজিত কুমার দেবশর্মা সাংবাদিকদের বলেন, কালবোশেখির মরসুমে বজ্র ঝড় বেশি হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে দুই থেকে তিনশ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।