জীবিকার তাগিদে মেহেরপুর যাবদপুর মোড়ে বিক্রি করেন চা : দেশের জন্য যুদ্ধ করলেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি জুবান আলী

মহাসিন আলী: পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে দেশকে স্বাধীন করতে শত্রুর মোকাবেলা করেও মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখাতে পারেননি জুবান আলী (৭৫)। শেষ বয়সে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে চা বিক্রি করছেন। এতে কোনোভাবে তার সংসার চললেও তিনি প্রয়োজীয় চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পাচ্ছেন না।

জুবান আলী মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের মৃত সুরাত আলীর ছেলে। তিনি ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপাড়া জানেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে সাড়া দিয়ে ২৭-২৮ বছর বয়সে ঘরে স্ত্রী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা এসএম আল আমিনের সাথে থেকে ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে তৎকালীন সরকারের আনসার ট্রেনিং গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে শত্রু মোকাবেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি কুষ্টিয়ার একটি সম্মুখযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করে ছিলেন। ওই সময় স্থানীয় বুড়িপোতা ক্যাম্প হতে পাকিস্তানি ইপিআর ধরে নিয়ে মেহেরপুরে হত্যা করেছেন বলেও তিনি জানান। তার সাথে বিভিন্ন স্থানে শত্রুর মোকাবেলায় যুদ্ধ করেছেন খোদাবক্স, এসএম আল আমিন, ভানু, পাতান, রায়হান প্রমুখ। এদের মধ্যে অনেকে মুক্তিযুদ্ধো হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা হতে তালিকাভুক্ত হতে জুবান আলী যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন। তার ডিজি নং- ডিজি ১১১৪৬২৪, আবেদনের তারিখ- ১৩/১১/২০১৩। এ থেকে জানা যায়, জুবান আলীর সহযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান যার গেজেট নং- ৪১৮, তার (জুবান আলী) যুদ্ধ সংগঠনের এলাকা মেহেরপুর, যুদ্ধকালীন প্রশিক্ষণ শিবিরের নাম বেতাই ইউথ ক্যাম্প (ভারত), প্রশিক্ষকের নাম মো. আব্দুল হান্নান (আনসার ওস্তাদ), যুদ্ধ পরবর্তী অস্ত্র জমা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের নাম এসএম আল আমিন (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) এতোগুলো তথ্য থাকার পরও তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়নি।

জুবান আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধের বহু প্রমাণপত্র তার কাছে ছিলো। কিন্তু তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে তার সংসারে আছেন স্ত্রী জাহানারা বেগম। ছোট ছেলে হিরোক বিবাহিত। সংসারে রয়েছে তারও এক ছেলে ও এক মেয়ে। হিরোক মেহেরপুর তামাক কোম্পানির খণ্ডকালীন চাকরিজীবী। বড় ছেলে রবিউল ইসলাম পরিবার নিয়ে মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। দুই মেয়ে বিবাহিত। বৃদ্ধ বয়সে অর্থাভাবে তিনি বাধ্য হয়েছেন চা তৈরি করতে।

মুক্তিযোদ্ধা এসএম আল আমিন বলেন- জুবান আলী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধে তাকে সাথে সাথে রেখেছিলেন। অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ শেষে তার মাধ্যমে সরকারের অস্ত্রাগারে অস্ত্র জমা দিয়েছেন। তিনি মনে করেন- জুবান আলীর নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হওয়া জরুরি।

যাদবপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক ইসলাম আলী জানান, জুবান আলী তার সমবয়সী প্রায়। সে সময় আমি শিক্ষকতা করতাম। আমি দেখেছি জুবান আলী মুক্তিযুদ্ধে অংশ করেছিলো।

মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহাম্মেদ জানান- জুবান আলী মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হতে চান সে তো ভালো কথা। আমি ঢাকা থেকে ফিরে তার খোঁজ নেবো। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে তিনি তাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।