লাউ বীজ উৎপাদনে মেহেরপুরের চাষিরা আগ্রহী হচ্ছেন

মহাসিন আলী: মেহেরপুরে লাউ বীজ উৎপাদন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ধান, গম ও পাটের চেয়ে লাউ বীজ লাভজনক ফসল হওয়ায় দিনে দিনে এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর, যাদবপুর, রাজাপুর, রাধাকান্তপুর, উজলপুর ও শোলমারী মাঠে বীজ সংগ্রহের জন্য করা লাউচাষ চোখে পড়ার মতো। প্রতিবিঘা জমিতে মাত্র ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে চাষি উৎপন্ন লাউ বীজ বিক্রি করে লাভ পাচ্ছেন প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।

ধান, গম ও পাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলে লোকসান গুনতে গুনতে মেহেরপুরের কৃষক যখন সর্বশান্ত। তখন কয়েকটি বেসরকারি বীজ উৎপাদন কোম্পানি মেহেরপুরের চাষিদের বিভিন্ন ধরনের বীজ উৎপাদনে আগ্রহী করে তোলেন। কোম্পানি চাষিদের অগ্রিম টাকা ও সার-বিষ দিয়ে লাউ, কলমি, পুঁই ও লাল শাক চাষ করে বীজ সংগ্রহে আগ্রহী করে তোলেন। বীজ উৎপাদনের পর কোম্পানিগুলো বাড়ি থেকে বীজ কিনে নিয়ে যায়। বীজ কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় দিনে দিনে মেহেরপুরের চাষিরা বিভিন্ন সবজি বীজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এখন ধান-পাট ও গমের মতো তাদের আর লোকসান গুনতে হয় না।

সরেজমিনে মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের গোরস্তান মাঠে গিয়ে দেখা যায়- মাঠের পর মাঠ লাউয়ের ক্ষেত। কোনোটিতে লাউ পাকানো হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত থেকে লাউ কেটে বীজ বের করার জন্য জড়ো করে রাখা হয়েছে। কথা হয়- যাদবপুর গ্রামের লাউচাষি জামালের সাথে। তিনি এক বিঘা জমিতে বীজ করার জন্য লাউ চাষ করেছেন। একই গ্রামের রেজা ও আনার এক বিঘা করে এবং চাঁদ আলী ২ বিঘা ও মহাতাব আলী ৩ বিঘা জমিতে বীজ সংগ্রহের জন্য লাউ চাষ করেছেন।

এলাকার লাউচাষিরা জানালেন- কার্তিক মাঠে ক্ষেত প্রস্তুত করে চাষিরা লাউ চাষ করেছেন। বর্তমানে লাউ থেকে বীজ সংগ্রহ করার জন্য তারা ক্ষেতে লাউ পাকাচ্ছেন। আবার কেউ বীজ সংগ্রহ করতে লাউ কেটে এক জায়গায় জড়ো করছেন। তারা জানালেন- ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে লাউ থেকে বীজ সংগ্রহ করা পর্যন্ত চাষির প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মাত্র। প্রতিবিঘা জমিতে ৪ মণ থেকে ৫ মণ বীজ পাওয়া যায়। প্রতিকেজি লাউ বীজ চাষি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে খরচ বাদ দিয়ে বিঘায় তাদের ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরুজ্জামান জানান- মেহেরপুর সদর উপজেলায় কিংবা জেলায় লাউ চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারিত নেই। তবে সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠের প্রচুর পরিমাণ জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ লাউক্ষেত থেকে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে। বাকি লাউক্ষেত থেকে লাউ বীজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানালেন- লাউ ও লাউ বীজ বিক্রি করে এ জেলার চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আমরা চাষিদের সবজি লাউ ও বীজ লাউ চাষে উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি।