দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিন

দ্যপণ্যে ভেজাল মেশানোসহ নানারকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বার বার সৃষ্টি হয়েছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের জন্য কতোটা আশঙ্কাজনক। আমরা মনে করি, যখন এমন কোনোকিছু বাজারে বিক্রি করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে- তা যেকোনো মূল্যে রোধ করার বিকল্প থাকা উচিত নয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেলো, সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার মতো মোড়ক তৈরি করে বাজারে দুধ বিক্রি করছে, এমন ১২টি কোম্পানির খোঁজ পেয়েছে সরকার! বলাই বাহুল্য যে, বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক। কেননা মিল্ক ভিটার মতো মোড়ক তৈরি করে বিক্রি করার অর্থই হলো, এর মাধ্যমে জনসাধারণকে এক ধরনের প্রতারণার দিকে ঠেলে দেয়া। আর যখন মিল্ক ভিটার মতো মোড়ক তৈরি করে বাজারে দুধ বিক্রি করছে এমন কোম্পানির দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী- তখন বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক মনে করি। যতো দ্রুত সম্ভব বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।

উল্লেখ্য যে, সচিবালয়ে গত রোববার এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বাজার থেকে সংগ্রহ করা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার প্যাকেটের মতোই দেখতে সাতটি কোম্পানির দুধের প্যাকেট সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপনও করেছেন প্রতিমন্ত্রী। যেসব মোড়কের আকার, আয়তন ছাড়াও এতে রঙের ব্যবহারও এক! ফলে মিল্ক ভিটার মতো প্যাকেট তৈরি করে তারা বাড়তি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে এমনটি মনে করাই সঙ্গত। আমরা বলতে চাই, এভাবে যখন মোড়ক নকল করে দুধ বাজারজাত করার মধ্যদিয়ে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, তখন তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এটা মনে রাখা জরুরি যে, কোনো পণ্যের নকল দুধ তৈরি করে বাজারজাত করার অর্থই হলো এক ধরনের দুঃসাহস দেখানো, ফলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারেই বিবেচনা করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যেন কেউ নকল দুধ তৈরি করতে না পারে।মিল্ক ভিটার লোগো দেখে সবাইকে দুধ কেনার অনুরোধ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মিল্ক ভিটার উদ্দেশ্য লাভ করা নয়, পুষ্টিকর শিশুখাদ্য আমরা সরবরাহ করতে চাই। সঙ্গত কারণেই এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে আমরাও বলতে চাই, যখন শিশুরা এ দুধ পান করছে তখন সেই দুধের মতো মোড়কেই যদি পুষ্টিহীন কিংবা নিম্নমানের দুধে বাজার সয়লাব হয়ে যায়, তবে তার চেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি আর কিছু হতে পারে না। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে এমনিতেই জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ, তারপরে আবার যদি এই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে বিষয়টি অত্যন্ত ভীতিপ্রদ, যা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে সমাধান করতে হবে।

সর্বোপরি, এ ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যান বলেছেন, আইনগত ব্যবস্থা তারা নেবেন। আমরাও চাই যতো দ্রুত সম্ভব আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এর সাথে জড়িতদের প্রকৃত উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখে বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এটা অত্যন্ত জরুরি, যেসব দুধ বাজারে আছে প্রত্যেকটিরই যথাযথ মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। এটাও খতিয়ে দেখতে হবে, যারা মিল্ক ভিটার মতোই মোড়ক ব্যবহার করে দুধ বাজারজাত করছে তাদের সঙ্গে কোনো চক্রের যোগসাজশ আছে কিনা। আমরা বিশ্বাস করি, যদি পুরো ঘটনাটা খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা যায় তবে জনসাধারণ বড় ধরনের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচবে যা সবারই কাম্য।