চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ : শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে ছাত্রীদের মানববন্ধন

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত শিক্ষক আহাদ আলীর শাস্তির দাবি উঠছে সব মহল থেকেই। আহাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে চায় সম্মিলিত নাগরিক কমিটি। গতকাল শনিবার তাদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকশ ছাত্রী মানববন্ধনে অংশ নেয়। মানবন্ধনে বক্তারা অভিযুক্ত ধর্ষক শিক্ষক আহাদ আলীর কঠোর শাস্তি দাবি করেছে। একই সাথে তারা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ ও অপসারণ দাবি তুলেছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের আদালত এলাকার প্রধান সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ও ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।

ঝিনুক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির কিছু সদস্যসহ চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের বিচার দাবিতে নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত নাগরিক কমিটির সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরী, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা, সিডিএফ’র সেক্রেটারি বিল্লাল হোসেন, উদীচীর সভাপতি অ্যাড. নওশের আলী, আকাঙ্ক্ষার শাহিন সুলতানা মিলি, জেলা সুফিয়া কামাল ফেলো মরিয়ম শেলী প্রমুখ। বক্তাগণ বলেন, গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক একই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনা পরদিন ধর্ষিতার বোন ও দুলাভাই বিদ্যালয়ে এসে জানানোর পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বের করে দেয় এবং ধর্ষক শিক্ষককে রক্ষার জন্য বিচারের নামে কালক্ষেপণ করতে থাকে। আস্তে আস্তে ঘটনা ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে জানাজানি হলে গত বুধবার বিদ্যালয় চত্বরে বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও অভিভাবকগণ বিক্ষোভ করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে ধর্ষক শিক্ষককে গণপিটুনি দেয়া হয়। সংবাদ পেয়ে জেলা লোকমোর্চার সভাপতি আলমগীর হোসেন লোকমোর্চা ও জেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ধর্ষিতা ছাত্রী ও তার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান। সন্ধ্যায় ধর্ষিতার দুলাভাইকে সাথে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় শিক্ষক আহাদ আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করলে কিছুক্ষণের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ ধর্ষক শিক্ষককে গ্রেফতার করে গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জেলহাজতে প্রেরণ করে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থামেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। তারা সন্তানতুল্য অনাথ ছাত্রীর পাশে না দাঁড়িয়ে বিদ্যালয়ে ধর্ষক শিক্ষক আহাদ আলীর পক্ষ নিয়ে দুই শিক্ষকের মাধ্যমে কয়েকজন ছাত্রীকে ধর্ষিতার বাড়িতে পাঠিয়ে মামলায় কিছু হবে না বলে হুমকি দিয়ে আসে। এছাড়া ও ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে দোষী বানানোর জন্য ছাত্রীদের মাঝে প্রচার করানোর জন্য ফন্দি আটতে থাকে। দীর্ঘ এক সপ্তাহ পার হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রীর পাশে না দাঁড়িয়ে ধর্ষক আহাদ আলীর পক্ষ নেয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাড. নুরুল ইসলামসহ সকল সদস্যের পদত্যাগের দাবি জানান। এ সময় অনাথ এই ছাত্রীর পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এডাবের সেক্রেটারি ইলিয়াস হোসেন, গভার্নেন্স কোয়ালিশন প্রতিনিধি জহির রায়হান, সিডিএফ’র প্রকল্প সমন্বয়কারী চুমকি প্রমুখ।

                উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়াস্থ ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আহাদ আলী গত ২৯ এপ্রিল প্রাইভেট পড়ানোর নামে বাসায় ডেকে ধর্ষণ করেন। বুধবার ওই শিক্ষক ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হন। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যের পদত্যাগ দাবি করা হয়। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন জানান, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা কমিটি থেকে সরে না গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। কারণ ধর্ষণের বিষয়টি জানার পরেও বেশ কয়েক দিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন তারা। এছাড়া এখনও তারা বিভিন্নভাবে ধর্ষণ মামলায় প্রভাব খাটানো চেষ্টা করছেন এবং ধর্ষিতার বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলে বেড়াচ্ছেন।