সন্তান হত্যার নেপথ্যে ধর্মভীরুতা ও ধর্মান্ধতা

 

ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই শিশু হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মা

স্টাফ রিপোর্টার: প্রচন্ত ধর্মভীরুতা ও ধর্মান্ধতার কারণেই জীবন দিতে হলো ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার চর বাগাট গ্রামের ফুলের মতো নিষ্পাপ দুই শিশুকে। রাতে ঘুমের মধ্যে গায়েবী আওয়াজ পেয়ে মা তাসলিমা বেগম শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন জাহেদ বিন আব্দুল্লাহ ত্বকি (৫) ও ছয়মাস বয়সী মেয়ে তহুরা তারিনকে। গত বুধবার রাতে তাসলিমাকে আটকের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা স্বীকারোক্তির কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, ঘটনার পর থেকেই শিশুদের মা তাসলিমা পুলিশের বিশেষ নজরদারীতে ছিলেন। বুধবার রাতে মধুখালী থানা পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। রাতে ঘুমের মধ্যে দুই শিশুকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাসলিমা জানিয়েছেন। তবে কেন এই হত্যাকাণ্ড তা পরিষ্কার না করলেও ঘুমের মধ্যে গায়েবী আওয়াজে শিশুদের হত্যার নির্দেশনা পান বলে দাবি করেন ঘাতক মা তাসলিমা।

উল্লেখ্য, গত ২ মে সোমবার ভোরে মধুখালী উপজেলার চর বাগাট গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তাসলিমা বেগম দম্পত্তির সন্তান  জাহেদ বিন আব্দুল্লাহ ত্বকি (৫) ও ছয়মাস বয়সী মেয়ে তহুরা তারিনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ওই দিনই শিশুদের দাদা ইউসুফ হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে মধুখালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। এদিকে শিশুদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার কারণ সম্পর্কে সংবাদকর্মীরা তখন তাসলিমা বেগমের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি নির্বিকার থাকেন। পরে অবশ্য তিনি এটা আল্লাহর ফয়সালা হিসেবে ব্যাখ্য দেয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার সময় শিশুদের পিতা আব্দুল্লাহ আল মামুন তার মায়ের চিকিৎসার জন্য ভারতের ভেলর এ অবস্থান করছিলেন।

নিজের দুই সন্তানের এমন মুত্যৃর পরও মা তাসলিমার নির্লিপ্ত  থাকার বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যসহ পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের ভাবিয়ে তোলে। ঘটনার পর থেকেই রহস্য উদঘাটনে পুলিশ বিভিন্ন উপায়ে তথ্যানুসন্ধান চালায়। রহস্যের জট কিছুটা খুলে গেলেই পুলিশ ঘটনার দুই দিন পর তাসলিমাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষেই পরিস্কার হয়ে যায় ঘটনার পুরো রহস্য। এদিকে শিশুদের হত্যার দায় স্বীকার করার পর শিশুদের দাদা ইউসুফ আলী বাদী হয়ে পুত্রবধূ তাসলিমা বেগমকে একমাত্র আসামি করে মধুখালী থানায় পুনঃরায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মধুখালী থানার অফিসার ইন চার্জ রুহুল আমীন জানান তাসলিমাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।