সকলেই আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী

 

 

বিচার চাওয়ার অধিকার সকলেরই রয়েছে। সমাজের সবাই বিচার চাওয়ার অধিকার পেলে অবহেলিত-নিম্নবিত্ত মানুষরা কেন পাবে না? মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, কেউ যাতে বিনা বিচারে কারাগারে আটকে থেকে কষ্ট না পায়।’ এবার জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের আনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এই চরম বাস্তবমুখি কথাগুলোই বলেছেন।

সমাজের বিত্তহীন বিচারপ্রার্থীদের বিচারপ্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিনা বিচারে আটক থাকার দুর্ভোগ সম্পর্কে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আন্তরিক সহৃদয় উচ্চারণ তেমন শোনা যায় না। বৃহস্পতিবার জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই শুধু নয়, চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের আয়োজনেও বিচার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মধ্য থেকেও হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো অনেক বক্তব্যই শোনা গেছে।  অতীতেও জাতীয় আইন সহায়তা দিবস উদযাপন হয়েছে। দুস্থ বিচারপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি জানানোর চেষ্টা চলেছে।  তাতে কিছুটা হলেও যে ঘাটতি ছিলো,  তা চুয়াডাঙ্গায় এবারের আয়োজন দেখে সেটাই অনেকের অনুমান।

‘গরিব-দুঃখীর বিচার পাওয়ার অধিকার, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার’, ‘গরিবের মামলার ভার বহন করে সরকার’- এসব শুধু স্লোগানেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী’। সংবিধানের ১৯নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে: ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে’। আশার কথা, সহায়সম্বলহীন ও নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী মানুষকে বিপুল অর্থ ব্যয়ে সরকার আইনগত সহায়তা দেয়। এটা জানে ক’জন? তা জানাতে চুয়াডাঙ্গার বিচার বিভাগকেই এবার পাওয়া গেছে রাস্তায়, শোভাযাত্রায়, জনসাধারণের মাঝে মেলায়। পত্রিকায় ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।

আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ ছাড়াও এ কার্যক্রমের আওতায় বিচারপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন এসিডদগ্ধ নারী-পুরুষ, বিধবা ও দুস্থ নারী, বিনা বিচারে আটক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী, পাচার হওয়া নারী ও শিশু এবং আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম যে কোন নাগরিক। ‘সরকারী আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান’ প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা যে কেউ বিনা মূল্যে আইনগত সেবা নিতে পারবে। এছাড়া ইতোপূর্বে প্রতিটি জেলা জজ আদালত ভবনে একটি ‘লিগ্যাল এইড অফিস’ স্থাপন করা হয়েছে।

তৃণমূল পর্যায়ে সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রমের বিস্তার ঘটিয়ে এটিকে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দাতাগোষ্ঠী, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো আন্তরিক হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান তাঁর সরকারের আন্তরিকতারই প্রকাশ। তা ছাড়া চুয়াডাঙ্গার এবারের সচেতনতা ছড়ানোর আয়োজন অবশ্যই অনুকরনীয়।