আলমডাঙ্গা ব্যুরো: মানবপাচার মামলায় ২ জনকে জেলহাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ভাংবাড়িয়ার ওমর আলীর বিরুদ্ধে। প্রতারিত মালয়েশিয়া ফেরত ৮ যুবক বাড়ি ফিরে জানালেন তাদের বিদেশ পাঠানোর সাথে জেলহাজতে অবস্থানকারীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে ওমর আলী বাদী হয়ে গত ২২ জানুয়ারি আদালতে উপজেলার কেশবপুর গ্রামের মৃত শমসের মণ্ডলের ২ ছেলে আয়ূব আলী ও মানিক এবং তৈয়ব আলীর ছেলে আশিকুর রহমানের নামে মানবপাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মানবপাচার প্রতীরোধ ও দমন আইনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা অধিক বেতন ও সুযোগ সুবিধার লোভ দেখিয়ে বাদীর ভাইয়ের ছেলে ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে লাখু ও একই গ্রামের আব্দুল মল্লিকের ছেলে বকুলকে মালয়েশিয়া যেতে রাজি করায়। ৬ লাখ টাকা নিয়ে আসামিরা গত বছর ২৯ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকায় নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে ভয় দেখিয়ে তাদেরকে চট্রগ্রামে নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে পানিপথের জাহাজে তুলে দেয়। জাহাজে তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তাদেরকে দাসত্ব শ্রমে বাধ্য করিয়ে বাদীর নিকট আরও ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। তাদের বিপন্ন জীবন রক্ষার্থে গত ১৮ জুন আসামিদের ব্যাংক একাউন্টে বাদী ওই টাকা জমা দেন। তারপরও আসামিরা লাখু ও বকুলকে মালয়েশিয়ায় না নিয়ে গিয়ে থাইল্যান্ডে আটকে রাখে।
আদালতে এ মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে প্রায় ২ মাস আগে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ মামলার আসামি আয়ূব আলী ও তার ভাই মানিককে আটক করে সংশ্লিষ্ট মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
এ মামলা দায়েরের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট আসামি ও তাদের আত্মীয়দের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত এ মামলাকে মিথ্যা বলে দাবি করা হয়। ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জোরালো অভিযোগ তোলা হয়।
এদিকে, পাচারের শিকার লাখু, বকুলসহ আশাবুল, হাকিম, আমিরুল, রফিকুল, ফকির ও বল্টু নামের ৮ যুবক থাইল্যান্ডের জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে গত ২৫ এপ্রিল বাড়ি ফিরেছে। গতকাল বাড়ি ফেরত এ ৮ যুবকের মধ্যে লাখু ও বকুলসহ বেশ কয়েকজনকে এক জায়গায় হাজির করে আসামিপক্ষ। সাংবাদিকসহ এলাকার গণ্যমান্যদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। তাদের পাচারের সাথে জেলহাজতে অবস্থানকারী আসামিদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে পাচারের শিকার যুবকরা জানায়। এমনকি বাদীর ভাইয়ের ছেলে লাখুও আসামিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা মিথ্যা বলে স্বীকার করেন। বাদীর ভাইয়ের ছেলে লাখু বলেন, আমরা পানিপথে গিয়েছিলাম টেকনাফের দালালের মাধ্যমে। মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাংবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে মনিরের নিকট থেকে টেকনাফের দালাল জহিরের মোবাইল নং নিয়ে তার সাথে আমরা যোগাযোগ করি। এ মামলার আসামিদের সাথে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। লাখু বাড়ি আসলে গতপরশু তার চাচা ওমর আলী তাকে জানায়, যে তার চাচা আসামিদের নিকট টাকা পাবে, সেকারণে তার চাচা মিথ্যা মামলা করেছে। ওই মামলায় সাক্ষ্য দিতে চুয়াডাঙ্গায়ও যেতে বলেছে তার চাচা ওমর আলী। ভাইয়ের ছেলের মুখে এমন কথা শুনে সকলে অবাক হন। বাদী ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনায় উপস্থিত সকলকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।