এক শিক্ষকের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা চেয়ে ছাত্রদের করুণ আকুতি

প্রবাসী-বিত্তবানসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান

sir

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ মিলন সরকার। কুষ্টিয়া সিরাজুল হক মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজীর শিক্ষক। শুধু ইংরেজী নয়, বাংলা সাহিত্যসহ অন্যান্য বিষয়েও তাঁর সমান পান্ডিত্য। যে কারণে সবাই তাকে ”পন্ডিত” মিলন স্যার হিসেবেই চেনেন। ছিপছিপে গড়নের এই মানুষটির পরনে সব সময় থাকে ঘিয়ে রংয়ের পাঞ্জাবী আর সাদা রংয়ের পায়জামা। সমাজ-সংসার নিয়ে তাঁর কোন দিনই তেমন একটা আগ্রাহ্য নেই। বই তাঁর নিত্য সঙ্গী। সব সময় বই পড়া আর লেখালেখি নিয়েই তাঁর সময় কেটেছে। নির্লোভ ও নিরাংকারী সহজ সরল এই মানুষটির জীবন কেটেছে অত্যন্ত সাদা সিধে ভাবে। ব্যক্তি জীবনে অভাব নামক দানব বার বার থাবা বসালেও লোভ-লালসা কখনই তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাই সব ছাত্রদের কাছেই তিনি ছিলেন অতি প্রিয় একজন আদর্শ শিক্ষক। মিলন সরকারের হাজার হাজার ছাত্র আজ সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিত। সবার প্রিয় সেই মিলন স্যার এখন নিরবে-নির্ভিতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। চলতি বছরের মে মাসের ৯ তারিখে হঠাৎ করেই বুকে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বশির উদ্দিনের কাছে ছুটে যান। চিকিৎসক তাঁকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাৎক্ষণাত হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বলেন, হার্টে একাধিক ব্লক রয়েছে। চিকিৎসকরা তাঁকে দ্রুত ঢাকায় গিয়ে বাইপাস সার্জারী করার কথা বলেছেন। কিন্তু বাইপাস সার্জারী করার মত আর্থিক সঙ্গতি তাঁর নেই। গোটা জীবনের সঞ্চয় বলতে ২০১০ সালে স্কুল থেকে রিটার্ড’র সময় গ্রাচ্যুয়টির ৮ লক্ষ টাকা। ওই টাকা সঞ্চয় পত্র কিনে পোষ্ট অফিসে রেখেছেন। সেখান থেকে মাসে ৭ হাজার টাকা লভ্যাংশ পান। দুরাবস্থা দেখে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী এক প্রকার জোর করেই কুষ্টিয়া শহরের কাটাইখানা মোড়ে একটি দোকান ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই দোকান ভাড়া দিয়ে মাসে তিন হাজার টাকা পান। মাত্র ১০ হাজার টাকা আয় নিয়ে বাসা ভাড়া দিয়ে কুষ্টিয়া শহরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালানোয় দায়! তার ওপর শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান অসুখ। একমাত্র ছেলে স্বাগত কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের মাষ্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। বাবার এই অবস্থা দেখে ছেলে বাধ্য হয়েই সংসারের হাল ধরতে কুষ্টিয়া পৌরসভায় ক্লারিক্যাল জব নিয়েছেন। মিলন স্যারের স্ত্রী সাগরিকা সরকার জানান, স্যার দীর্ঘদিন ধরে ল্যাঞ্চ এবং পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। সব সময় ইনহেলার ব্যবহার করা লাগে। নতুন করে যোগ হয়েছে হার্টের সমস্যা। মাসে ৫-৬ হাজার টাকা ওষুধের পিছনে চলে যায়। সংসার কিভাবে চলে তা কেবল ভগবানই জানেন! হাসপাতাল থেকে আসার পরের দিন স্যার নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। দুরাবস্থার কথা শুনে স্যারের এক ছাত্র কাজল তালুকদার ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় এসে ছুটে যান শহরের আমলাপাড়াস্থ শিক্ষক মিলন সরকারের ভাড়া বাড়িতে। কাজল তালুকদার শিক্ষক মিলন সরকারের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে জীবন বাঁচাতে স্যারের ছাত্রসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটার্স দেন। শরীরিক ও মানষিকভাবে চরম ভেঙে পড়া প্রবল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এই শিক্ষক চিকিৎসার অভাবে এখন নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। বললেন, মৃত্যুর যাতনা তো ভোগ করতেই হবে। আমি না হয় মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করলাম! তোমার আমাকে নিয়ে লেখা-লেখি করলে আমার সম্মানহানী হবে। সবাই আমাকে করুণা করবে! আর এভাবে কেউ কাউকে সহযোগিতা করে না! আমি কারোর করুণার পাত্র হতে চাই না! তাহলে কী নিভৃতচারী মহান এই শিক্ষক চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে চলে যাবেন না ফেরার দেশে! আসুন আমরা স্যারের হাজার হাজার ছাত্র যে যেখানেই থাকি না কেন স্যারের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক মিলন সরকারের সহযোগিতার জন্য প্রবাসী সমাজের বিত্তবানসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যার যত টুকু সামর্থ আছে এগিয়ে আসুন এই আহবান জানিয়েছেন স্যারের ছাত্ররা। আমাদের একটু সহযোগিতা মহান এই শিক্ষকের জীবন বাঁচাতে পারে। যোগাযোগ : ০১৭১৫-১১০৬৫১। সহযোগিতা পাঠানোর ঠিকানা সঞ্চয়ী হিসাব নং ১১০১৩৪০০০৩২১৬, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, কুষ্টিয়া শাখা এবং  সঞ্চয়ী হিসাব নং-৩৪০০৭১৩৯ অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, থানাপাড়া শাখা, কুষ্টিয়া। বিকাশ করতে পারেন এই নাম্বারে ০১৭১৫-১১০৬৫১।