সারের ভর্তুকির টাকা সিন্ডিকেটের পকেটে : বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে ৬ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: কৃষিখাতে ভর্তুকি দেয়ার পর দেশে উত্পাদিত টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সার প্রতি বস্তা ১১শ টাকায় ও ডিএপি (ডাই এমোনিয়াম ফসফেট) সার ১২৫০ টাকায় কৃষকের পাওয়ার কথা। কিন্তু দেশের কোথাও এই দামে টিএসপি ও ডিএপি সার পাওয়া যায় না। একটি অসাধু সিন্ডিকেট সরকারের ভর্তুকি দেয়া টিএসপি ও ডিএপি সারের পুরোটাই নিজেরা কিনে নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণে প্রতি বস্তা টিএসপি ১১শ টাকার বদলে বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা আর ডিএপি ১২৫০ টাকার বিপরীতে বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা থেকে ১৯০০ টাকায়। অভিযোগ মতে, শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে চট্টগ্রামের টিএসপি সার কমপ্লেক্সে অবস্থিত ডিএপি সার কারখানার কিছু অসাধু কর্মকর্তা যুক্ত রয়েছেন। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে দেখতে পেয়েছে, একটি সিন্ডিকেট বছরে ৬ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে। এর সঙ্গে স্থানীয় একাধিক সিন্ডিকেট সরাসরি জড়িত। গোয়েন্দা সংস্থা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন দফতরে সুপারিশও করেছে।

চট্টগ্রামে ৱ্যাব-৭’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন বলেন, আমরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। আগে সার সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে অভিযান চলেনি। সিন্ডিকেটের সদস্যদের ব্যাপারে তথ্য থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার প্রতি বস্তা টিএসপি সার অনুমোদিত ডিলারদের কাছে ১১০০ টাকায় বিক্রি করে। আর ডিএপি বিক্রি করে ১২৫০ টাকায়। এ বরাদ্দপত্র চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত টিএসপি কমপে­ক্স ও ডিএপি সারকারখানায় নিয়ে গেলে গোডাউন থেকে ডিলারকে বরাদ্দের সমপরিমাণ সার দেয়া হয়। প্রত্যেক জেলা, থানা বা উপজেলার জন্য সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি অধিদফতরের অনুমোদিত এ ডিলাররা নিজ নিজ পরিবহন করে এলাকায় এ সার নিয়ে যান। নিজ জেলার কৃষকের মধ্যে ডিলারদের এই সার বিক্রি করার নিয়ম রয়েছে। সারা দেশে এ রকম ডিলার রয়েছে ৫ হাজার ৪০০ জন।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চট্টগ্রামের মাঝিরহাটের ৫ জনের একটি সিন্ডিকেট সারা দেশের ডিলারদের নিয়ন্ত্রণ করে। ডিলারদের কাছ থেকে পদ্মা ট্রান্সপোর্ট, জামাল এন্টারপ্রাইজ, সুলতানা ট্রেডার্স, মান্না এন্টারপ্রাইজ ও রুবেল এন্ড ব্রাদার্স প্রতিষ্ঠান সারের বরাদ্দপত্র কিনে নেয়। এরপর তারা বাজারে কৃত্রিমভাবে সারের সঙ্কট তৈরি করে। পরে ৭০ জনের আরেকটি সিন্ডিকেটের কাছে এ বরাদ্দপত্র তারা বিক্রি করে দেয়। এরপর তা যায় সার ব্যবসায়ীদের কাছে। কিন্তু সার ব্যবসায়ীরা যখন সার তুলতে যান তখন তাদের প্রত্যেকে প্রতি বস্তায় ৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় প্রভাবশালী ওই ৫ প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের কাছে। চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে বছরে ১ লাখ টন ও ডিএপি কারখানা থেকে বছরে দেড় লাখ টন সার সরবরাহ করা হয়। ধান চাষের মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি ও ৭০০ মেট্রিক টন ডিএপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়। ১ টন সারে ২০ বস্তা হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন ২০ হাজার বস্তা টিএসপি ও ১৪ হাজার বস্তা ডিএপি সার ছাড় করা হয়। ৩৪ হাজার বস্তা সারে প্রতিদিন চাঁদা ওঠে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। শুধু একটি খাতে এভাবে বছরে ৬ কোটি টাকার বেশি চাঁদা ওঠে। এভাবে সারের বস্তার হাত বদল হতে হতে চাঁদার পরিমাণও বেড়ে যায়। ফলে     স্থানীয় বাজার থেকে কৃষকরা প্রতি বস্তা টিএসপি ১১’শ টাকার বদলে ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা আর ডিএপি ১২৫০ টাকার বিপরীতে ১৮০০ টাকা থেকে ১৯০০ টাকায় কিনতে হয়।