বিরোধী প্রার্থীকে মারধর : নির্বাচনী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ

 

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের রয়েছেন ৫ বিদ্রোহী প্রার্থী। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। তবে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা ভোট চাওয়া ও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহী প্রার্থীরা ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনী এলাকায় তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। কর্মীদের মামলায় জড়ীয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। এমনকি প্রার্থীর কর্মীরা ভোট চাইতে গেলে তাদের নানাভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ। সীমানা নিয়ে জটিলতায় শিমলা-রোকনপুর ও রায়গ্রাম ইউনিয়নের ভোট হচ্ছে না। বাকি ৯ ইউপিতে তৃতীয় দফায় ২৩ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৯ ইউপির মধ্যে একটিতে চেয়ারম্যান ও ৯ সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৮ ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ওহিদুজ্জামান। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য লিয়াকত আলী খান। মালিয়াট ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন আজিজুল ইসলাম খাঁ। এখানে বিদ্রোহী রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিনুর রহমান। বারোবাজার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মাত্র দুজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- নৌকা প্রতীকে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও বিদ্রোহী আনারস প্রতীকে যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি মো. ইমদাদুল হক। কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ূব হোসেন ও মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. তরিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাখালগাছি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মহিদুল ইসলাম আর মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন। ৮ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন ৫ জন। যারা সবাই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী লিয়াকত আলী খান অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা বিভিন্ন এলাকা থেকে তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন। কর্মীদের নানাভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে, তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এখানে জোর করে ভোট করার চেষ্টা চলছে। মালিয়াট ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী শাহিনুর রহমান ওই সব অভিযোগের পাশাপাশি ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। বারোবাজার ইউনিয়নের মো. ইমদাদুল হক দাবি করেন, তাকে কোনোভাবে মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না। ভোট চাওয়ার জন্য নারী কর্মী পাঠিয়েও রক্ষা পাচ্ছেন না। তাদেরও তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা তাকেও মারধর করেছে। ১৩ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি আহত হয়ে ৪ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে এলাকায় এলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভোট চাইতে যেতে পারছেন না। রাখালগাছি ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন অভিযোগ করেন, ভোটের মাঠ থেকে সরে না দাঁড়ালে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। এই অবস্থায় সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কে আছেন।

এসব বিষয়ে নৌকা প্রতীকের দু প্রার্থী জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীরা যে অভিযোগ করছেন তা সঠিক নয়। সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের ওহিদুজ্জামান দাবি করেন, তিনি নিজেই হুমকিতে রয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন তাকে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পোস্টার ছেঁড়াকে তিনি সমর্থন করেন না। এটা কারা করেছে, তা তার জানা নেই। রাখালগাছি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্রোহীরা যে অভিযোগ করছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ, এখনো ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তাদের পোস্টার ঝুলে আছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে পরাজয় ভেবে তারা এসব কথাবার্তা বলছেন। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।