ধানের দাম নিয়ে হতাশায় দামুড়হুদার বর্গাচাষিরা

 

কুড়লগছি প্রতিনিধি: মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষকেরা ধানের আবাদ করেন। কিন্ত বাজারে দাম কম থাকায় ধান আবাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বর্গাচাষিরা। জমির মালিককে উৎপাদিত ধানের ভাগ হিসেবে বিঘাপ্রতি ৭ মণ হারে দিতে হয় চাষিদের। ভাগ দেয়ার পর তারা যে ধান পান তাতে তাদের উৎপাদন খরচই ওঠে না। এ জন্য বাধ্য হয়ে বর্গাচাষিরা জমি ফিরিয়ে দিবে বলে জানান।

সরজমিনে কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ধান্যঘরা এলাকায় কথা হয় জমির মালিক ও বর্গাচাষিদের সাথে। ধানের আবাদ নিয়ে সবাই তাদের হতাশার কথা জানান। কৃষক আবুল হোসেন জানান, এ বছর নিজের ৬০ শতাংশ ছাড়াও ৮০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে ধানের আবাদ করছেন। গত মরসুমে তার বর্গা জমি ছিলো ১২০ শতাংশ। কিন্ত ধানের দাম কম থাকায় তিনি এবার জমির মালিককে ৪০ শতাংশ জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর ধানের আবাদ কইরা লস খাইছি। তাই আস্তে আস্তে জমির মালিককে জমি ফিরাইয়া দিতাছি। কী আর করমু আমরা কৃষক মানুষ। কাজের মধ্যে থাকতে হয়। তাই লস মাইনাও ধান আবাদ করেছি। তবে সরকার যদি ধানের দাম না বাড়ায় তাইলে বর্গা জমি আরও কমাইয়া দিমু। গত বছর ১২৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে ধান আবাদ করেছিলেন একই গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম। কিন্ত ধান আবাদ করে লোকসান হওয়ায় তিনিও জমির মালিককে ৪০ শতাংশ জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, এ জমিতে ধান আবাদে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে অন্তত ১০ হাজার টাকা। ধান হবে সর্বোচ্ছ ২২ মণ। বর্গাদারের ভাগ বাদে তিনি ধান পাবেন ১৫ মণ। বাজারে বর্তমানে ধানের দাম ৫৫০ টাকা। সেই হিসেবে ১৫ মণ ধানের দাম আসে আট হাজার ২৫০ টাকা। অর্থাৎ লোকসান ২ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘সারা বছরই চাল কিনা খাইতে হয়। তাই ক্ষতি গেলেও কষ্ট কইরা ধানের আবাদ করি। তাতে অন্তত কিনা খাওয়ার ঝামেলাটা থাকে না।’ ধানের দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা মণ হওয়া দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন। ওই এলাকার একজন বড় কৃষক নজরুল ইসলাম। তিনি এবার নিজের ১০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করছেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ধান আবাদ কইরা লাভ হয় না। তাই আবাদের ঝামেলাও মাথায় নিতে ইচ্ছে করে না। এ জন্য আমার বেশির ভাগ জমিই বর্গা দিয়ে রেখেছি। কিন্ত ধান আবাদে লোকসান হওয়ায় বর্গাচাষিরা ৩ বিঘা জমি আমাকে ফেরত দিয়েছে। এ নিয়ে খুব বেকায়দায় আছি। কী আর করার। বাধ্য হয়ে লোকসান মেনেই ধানের আবাদ করতেছি। কারণ, জমিতো আর পতিত রাখা যায় না।