না ভূমিকম্প নয়, হড়কা বানও নয়। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তত্ত্বাবধানে নির্মিত পয়ঃনিষ্কাশন নালার ওপরের সিমেন্ট বালি খোয়ার ছাউনি ধসে পড়েছে একটি গরুর ভারে। গতপরশু চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্ক সড়কের ড্রেনের ভেতর থেকে গরুটি উদ্ধার করতে সিভিল ডিফেন্স সদস্যদের তৎপরতা দেখে উৎসুক জনতার ভিড় জমে। সেখানে ওই ড্রেনের ওপরে দেয়া স্লাব এবং ধসে পড়ার ধরন দেখে যার মুখে যা এসেছে তাই বলেছে, ভাগ্যিস নির্মাণের দায়িত্বে নিয়জিত ঠিকাদার বা ওই কাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকাদের তেমন কেউই বোধহয় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, থাকলে নির্ঘাত রক্তপাত ঠেকাতে হাঁপিয়ে উঠতে হতো পুলিশকে।
ভারত উপমহাদেশের বাংলাদেশ মিয়ানমারসহ বিশাল এলাকাকে ভূমিকম্প প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের যুক্তি, উরেশিয় প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে ভারতীয় প্লেট। ভূগর্ভে দু প্লেটের ঠেলাঠেলিতে অনবরত কম্পন্ন হচ্ছে, মাঝে মাঝেই বড় ধরনের ভূমিকম্পও অনুভূত হচ্ছে। রিখটর স্কেলেও ধরা পড়ছে তার ভয়াবহ মাত্রা। অথচ আমাদের দেশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তদারকি কর্তাদের কারো কারো অর্থেই হোক, অন্য কিছুতেই হোক অন্ধ করে দিব্যি ফাঁকিজুকি দিয়ে কাজ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অর্থায়নে দর্শনায় উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ভবন নির্মাণ কাজে রডের বদলে বাঁশের কাবারি দেয়ার বিষয়টি বিশ্ববাসীকেই হতবাক করেছে। বিবিসি’র মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জাপানের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা সম্প্রচারের মাঝে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, জাপানে নির্ভেজাল ভবনেও যখন ভূমিকম্পের আঘাতে প্রাণহানি অনিবার্য হয়ে উঠছে, তখন বাংলাদেশে রডের বদলে বাঁশের কাবারি দিয়ে নির্মাণ করা ভবন ভূমিকম্পে কতোটা ভয়ঙ্কর ক্ষতির কারণ হতে পারে?
না, ভাগ্যের দোষ দেয়ার যুগ নেই। আমজনতার অর্থ ভাগাভাগি করে কাজে ফাঁকি দেয়ার কুফল বহন করতে হবে কেন? নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, ছোট ছোট ভূ-কম্পনগুলোকে বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে বিবেচনা করেন বিশেষজ্ঞদের সিংহভাগ। তাঁদের এমন আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শুধু দৈব বা ভাগ্যের ওপর ভর করে বসে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ যেন কোনোভাবেই আমাদের সকল অর্জন ধূলিসাৎ করতে না পারে, সেজন্য আগাম প্রস্তুতি থাকা দরকার। দুর্নীতি যেখানে আষ্টেপিষ্টে অক্টোপাসের মতো চিপে মারছে, সেখানে ড্রেনের স্লাব ভেঙে মানুষ মরেনি সেটাই তো অষ্টম আশ্চায্যের।