হুমকির মুখে ঐতিহাসিক আম বাগান

 

মাজেদুল হক মানিক/শেখ শফি: বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মভূমি ঐতিহাসিক বৈদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগর আম্রকানন বিলিনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শতবর্ষী এসব আম গাছ পরিচর্যার অভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বাগান সৃষ্টির সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অর্ধেক গাছ মারা গেছে। প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে ঘটা করে বাগান সাজানো হলেও সারা বছর খোঁজ রাখেনা কেউ। বাগানের ফল বিক্রির অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয় কিন্তু বাগান পরিচর্যায় কোনো ভূমিকা রাখে না কোনো দফতর। আম গাছ রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক দালিলিক প্রমাণ মুছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগর আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু জমিদার কেদারনাথ রায়ের তৈরি করা আমবাগানে নিরাপদ স্থান হিসেবে শপথের স্থান বেছে নিয়েছিলেন প্রথম সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যরা। মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঠাঁই পায় বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননের নাম। যা মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। দেশ বিদেশের দর্শনার্থী থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ বারবার ছুটে আসেন আম্রকাননের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সারিসারি আমগাছের ছায়াঘেরা পরিবেশ মুগ্ধ করে যেকোন দর্শনার্থীদের। উৎসবের দিনগুলোতে মুজিবনগর আম্রকাননে ছুটে আসেন হাজারো দর্শনার্থী।

৩৬ দশমিক ১৬ একর জমির ওপরে মুজিবনগর আম্রকানন। বর্তমানে কয়েক প্রজাতির ছোট বড় প্রায় ১ হাজার  আমগাছ রয়েছে। যার সংখ্যা দেশ স্বাধীনের পরও প্রায় তিন হাজার ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। তবে জীবন্ত গাছগুলোর বেশিরভাগ অবস্থা ভাল নয়। আম গাছের গোড়া থেকে ডালপালা পর্যন্ত নানা রোগের আক্রান্ত। কোনো কোনো গাছের ডাল ভেঙে গুড়িতে খাদ সৃষ্টি হয়েছে। পরগাছা জমে গাছের স্বাভাবিক বাড়ন্ত বাধাগ্রহস্থ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সেচ ও পরিচর্যার অভাব এবং ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছগুলো প্রায়ই মরতে দেখা যায়। মূলত দেখভালের অভাবে স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি মৃত্যুর মুখে পতিত আমগাছগুলো। সরকারি সম্পত্তির আম বাগান তাই জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ থেকে প্রতি বছরই বাগানের ফল ইজারা দেয়া হয়। প্রতি বছর ৫-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাজস্ব পায় জেলা প্রশাসন। ইজারার অর্থ জমা হয় সরকারি কোষাগারে। এর মধ্যদিয়ে বাগানের মালিকানা ঠিক রাখলেও বাগান দেখভালে কোনো পদক্ষেপ নেই জেলা প্রশাসন কিংবা উপজেলা প্রশাসনের। তবে এখনই আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাগানটিকে পুনরুজ্জিত করা সম্ভব বলে জানালেন কৃষি কর্মকর্তারা।

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোফাখখারুল ইসলাম জানান, গাছ পরিচর্যার জন্য ২/৩ বছর ইজারা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও রোগের প্রতিরোধক প্রয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও গাছের ডালপালা কেটে ফেলে আধুনিক জাতের আম গাছের ডাল দিয়ে কলম তৈরি করে বাগানটিকে তার যৌবনরুপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

শুধু ইতিহাস সংরক্ষণ নয়, এলাকার পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় এ ধরণের বড় আম বাগান রক্ষার দাবি জানালেন স্থানীয়রা।

তবে এবার মুজিবনগর দিবসের পর থেকে বাগান রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিলেন নবাগত জেলা প্রশাসক পরিমল কুমার সিংহ। তিনি বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে। অনুমতি নিয়ে বাগান পরিচর্যাসহ সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিহাস রক্ষায় বাগান বাঁচানোর জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।