যৌতুক না পেয়ে নৃশংসতা : সচেতন মহলের বিরূপ সমালোচনা

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার চিৎলায় যৌতুকের টাকার জন্য দু সন্তানের জননী স্ত্রী হাসিনা খাতুনকে (২৮) হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা বলেছেন, স্বামী প্রভাষক শামীমের নৃশংসতা দেখে চমকে ওঠে প্রতিবেশীরাও।

অভিযোগকারীরা বলেছেন, প্রভাষক শামীম যখন তার স্ত্রীকে নির্মমভাবে নির্যাতন করতে থাকেন, তখন ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন গৃহবধূ হাসিনার ছোট ভাই রিংকু (২৫)। তাকেও হাতুড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। রক্তাক্ত আহত দু ভাই-বোনকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (চিৎলা হাসপাতালে) চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। শামীম দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের চিৎলা গ্রামের মতিয়ার শেখের ছেলে এবং কার্পাসডাঙ্গা মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং বড়সলুয়া মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর কাম-ডেমোনেস্টেটর। এ ঘটনায় গৃহবধূর পিতা বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে হাসিনার সাথে প্রায় পনের বছর আগে একই গ্রামের দলিল লেখক মতিয়ার শেখের ছেলের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। অভিযোগ- বিয়ের পর থেকে নানা অজুহাতে যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রীকে মারধর করতো স্বামী শামীম ওরফে মিলন। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে মেরে মুখমণ্ডল ফ্যাকচার করে দেয়। নাক-মুখ দিয়ে গলগল করে ঝরতে থাকে রক্ত। এ সময় বোনকে ঠেকাতে ছোট ভাই রিংকু এগিয়ে গেলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে মেরে রক্তাক্ত জখম করা হয়। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ হাসিনার পিতা আমির হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, জামাই শামীম আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। পাশাপাশি বাড়ি। বিয়ে পর থেকেই সে আমার মেয়েকে যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করে আসছে। তাদের সংসারে ইভা (১২) ও রাব্বি (৩) নামের দুটি সন্তান রয়েছে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক দফা টাকা দিয়েছি। বিয়ের পরপরই আমার কাছে দেড় বিঘা জমি বিক্রির কথা বলে ৪০ হাজার টাকা নেয়। পরে ওই আর আমাকে দেয়নি। এছাড়া প্রায় ৮ বছর আগে কার্পাসডাঙ্গা কলেজে প্রভাষক হিসেবে চাকরি নেয়ার সময় আমি ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এরপর ওখানে বেতন না হওয়ায় পরে বড়সলুয়া কলেজে কম্পিউটার অপারেটর কাম-ডেমোনেস্টেটর পদে চাকরি নেয়। ওখানেও বেশ কিছু টাকা দেয়া হয়। এক কথায় মেয়ের সুখের কথা ভেবে কতো টাকা যে দিয়েছি তার কোনো হিসেবে নেই। তারপরও আমার মেয়ে সুখ পেলো না। আমার মেয়েরই পোড়া কপাল। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ হাসিনা খাতুন বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় মেয়ে ইভা ওর বাবাকে বলছে বাবা আপনি আর মাকে মারবেন না। এ কথা বলার সাথে সাথে সে রেগে উঠে বলে তুই আমার মেয়ে হয়ে আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস বলেই আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাটি জানার জন্য আমার পিতা ও ছোট ভাই রিংকু শামীমদের বাড়িতে আসে। তাকে মারধরের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ঘর থেকে হাতুড়ি বের করে এনে আমাকে পুনরায় পেটাতে থাকে। হাতুড়ির আঘাতে আমার নাক-মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হতে শুরু করে। আমাকে ঠেকাতে ছোট ভাই রিংকু এগিয়ে এলে শামীমের ভাগ্নে আশিক তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় আমার পিতাকে বিশ্রি ভাষায় গালি দেয় শামীম। গৃহবধূ হাসিনা দু চোখে অশ্রু ছেড়ে দিয়ে আরও বলেন, শুধু আমি বলেই মারধর খেয়েও এতোদিন ওর সংসার করে গেলাম।

এদিকে একজন প্রভাষক হয়ে যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রীকে বারবার মারধরসহ হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করার বিষয়টি মোটেও ভালো দৃষ্টিতে নেয়নি এলাকার সচেতন মহল। সচেতন মহল বলেছে, যে শিক্ষা তার নীতি-নৈতিকতা কিছুই শেখায় না সে শিক্ষা মূল্যহীন। তাছাড়া অমন রগচটা শিক্ষকের কাছে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানো কতোটা নিরাপদ তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল। তারা এ ঘটনায় যৌতুকলোভী প্রভাষক শামীমের প্রতি ধিক্কারসহ নিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানিয়েছে।