ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: রাজনৈতিক চাপ, হত্যার হুমকি ও দলীয় ক্যাডারদের ভয়ে ঝিনাইদহের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দৌড়ের ওপর রয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থীদের খোঁজ করছে তারা। অনেকের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীরা অসহায় হলেও কালীগঞ্জের পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইদহের সুরাট ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুলসহ তিনজনের মনোনয়নপত্র কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলার হরিণাকুণ্ডুর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে বোমাবাজি করা হচ্ছে। এদিকে কালীগঞ্জের বারোবাজার ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীকে পাস করানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। স্বতন্ত্র, জাতীয়পার্টি ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বাড়িতে অচেনা লোক পাঠানো হচ্ছে এবং আত্মীয় স্বজনদের মারধর করা হচ্ছে। কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নে কোনো প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি। বারোবাজারে এক ইউপি মেম্বার মনোনয়ন জমা দিয়ে ক্যাডারদের ভয়ে নিখোঁজ ছিলেন। নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীরা অসহায় হলেও কালীগঞ্জের পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আমলে নিচ্ছে প্রশোসন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সর্বাধিক ৭ চেয়ারম্যান প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ৩য় ধাপের ইউপি নির্বাচনে কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় ৫ নং সিমলা রোকনপুর ও ৭ নং রায়গ্রাম ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না। ২ নং জামাল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোদাচ্ছের হোসেনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৮টি ইউনিয়নে মোট ২৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে ইউনিয়নে জামায়াতের কোনো প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাচন অফিসসূত্রে জানা গেছে ১ নং সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী ওহিদুল ইসলাম, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইলিয়াস রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী লিয়াকত আলী খান লিটন (আ.লীগ বিদ্রোহী) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে জনপ্রিয়তা থাকার পরও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী আলিনুর রহমান। তার বাড়িতে কয়েক দিন আগে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া অপর স্বতন্ত্রপ্রার্থী শওকত আলীও মাঠে দাঁড়াতে না পেরে সরে পড়েছেন। ৩ নং কোলা ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী আয়ূব হোসেন, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্বতন্ত্রপ্রার্থী রিংকু ঘোষ তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ৪ নং নিয়ামতপুর ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী রাজু আহম্মেদ রনি লস্কর, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান মিলন, স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাজেদুল হক লিটন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্বতন্ত্রপ্রার্থী হাফিজুর রহমান তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ৬ নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলী শেখ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৮ নং মালিয়াট ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী আজিজুর রহমান খান, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মজিদ শেখ, স্বতন্ত্রপ্রার্থী গোলাম মোস্তফা শুকুর, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ইকরামুল হক (বিএনপি বিদ্রোহী) ও শাহিনুর রহমান(আ.লীগের বিদ্রোহী) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯ নং বারোবাজার ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী এমদাদুল হক (আ.লীগের বিদ্রোহী) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বারোবাজার ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাদ ইকবাল শিপন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ১০ নং কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী আয়ূব হোসেন, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী তরিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১১ নং রাখালগাছি ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী মহিদুল ইসলাম, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইসমাইল হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলতাফ হোসেন (আ.লীগের বিদ্রোহী) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইদ্রিস আলী তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় ৫ নং সিমলা রোকনপুর ও ৭ নং রায়গ্রাম ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি প্রার্থীদের হুমকি ও নির্বাচনে কতিপয় মহলের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, এ বিষয়ে কেউ সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।