অতীত যা পারেনি বর্তমানকে তাই করে উজ্জ্বল করতে হবে ভবিষ্যত

অভাবের সংসারেও একদিন স্বচ্ছলতা আসে, কর্তা যদি দূরদর্শিতার সাথে সে লক্ষ্যে পৌঁছুনোর মতো পরিকল্পনা হাতে নেন এবং পরিবারের সকলকেই যদি পরিশ্রমী করে তুলতে পারেন তবেই। অন্যথায় দীর্ঘশ্বাসই পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়। যেমন আমাদের সমাজের দশা খানেকটা সেরকমই। তা না হলে বিদ্যুতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বেহালশা ফুটে উঠতো? সরকারি ভবনেই কি রডের বদলে বাঁশের কাবারি দেয়ার সাহস পেতো?

ষড়ঋতুর দেশ। কালবোশেখির হানা? বছরান্তে দু-একটি তো নিয়মের মধ্যেই পড়ে। তাহলে একটি কালবোশেখিতে লণ্ডভণ্ড হওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অতোটা নাকানি-চুবানি কেন? কারণ পূর্বের দায়িত্বপালনকারীদের যেমন দূরদর্শিতায় ঘাটতি, তেমনই বর্তমানের দুর্নীতি। বিদ্যুত সরবরাহের জন্য তার আর গাছের ডাল জড়াজড়ি করে থাকে। এ কারণে বিদ্যুতের অপচয়ই শুধু হয় না, সামান্য বাতাসেই বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে যেমনটি ভেঙে পড়েছে গত কয়েক দিন আগের পৃথক কালবোশেখির হানায়।

শুরুতেই যদি বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা ভূ-গর্ভ দিয়ে টানা হলে বছরান্তে কালবোশেখির আঘাতে যেমন কাড়ি কাড়ি টাকার ক্ষতি গুনতে হতো না, বাধাগ্রস্ত হতো না উন্নয়ন। আর বর্তমানের দুর্নীতি? ঝড়ে ছিড়ে পড়া বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে পড়াটা লাইনম্যানদের জন্য বয়ে এনেছে যেমনে সৌভাগ্য। বকশিস ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিদ্যুত সংযোগ পুনচালুরও সুযোগ নেই। কেন? অবশ্যই এজন্য শুধু লাইনম্যানদের দায়ী করা যায় না, সকলেই চান আগে সংযোগ, আগে বাড়তি সুবিধা। আর সে কারণেই অনিয়মটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে নিয়মে। এবারের ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ যেহেতু বেশি, সেহেতু বকশিস বাণিজ্যও রমরমা।

যা করার দরকার ছিলো শুরুতেই, তা যখন করা হয়নি তখন দায়িত্বশীলদের দূরদর্শিতায় ঘাটতির বিষয়টি অস্বীকার করার জো নেই। এখন যা করার দরকার তা যদি যথাযথভাবে কারা না হয় তবে অবশ্যই বর্তমানকে ভবিষ্যত দায়ী করবেই। যেমন অতীতের দায়িত্বশীলেরা বর্তমানের কাঠগড়ায় দোষী। যদিও অতীতে দরিদ্র বা অপ্রতুলতা অজুহাত খাড়া করা যেতেই পারে। অভিন্ন অজুহাতে বকশিস রেওয়াজ সামাজিক স্বীকৃতি পেলে ভবিষ্যত কি আমাদের ছেড়ে দেবে? অবশ্যই না। সে কারণেই ক্ষতিকর রেওয়াজ রুখতে হবে। যেন-তেন করে বর্তমানকে পার করার মানসিকতাও পরিবার করে ভবিষ্যত সুন্দর করার পথেই হাঁটতে হবে।