স্বাস্থ্যের উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিলো গতকাল বৃহস্পতিবার। এ দিনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে ১৯৫০ সাল থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্যসেবার বা উন্নয়নের কোনো এক অধ্যায়কে নিয়ে কাজ করে। সচেতনতা সৃষ্টি থেকে শুরু করে, সরকারি পর্যায়ে কিভাবে পরিবর্তন আনা যায় ণ্ড এসব বিষয় সামনে তুলে ধরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস সবার জন্যই। চিকিৎসক, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ আমাদের সবার জন্যই এ দিবস। কেননা শুধুমাত্র এক অংশের সচেতনতা বৃদ্ধি করে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়, প্রয়োজন সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা সৃষ্টি করা। স্বাস্থ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার এবং সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত মানব উন্নয়নের সূচক। স্বাস্থ্যের উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়; মানুষের জীবনের গুণগত মান ও সামাজিক প্রগতির ভিত্তিস্বরূপ। ধনী-গরিব সকলের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছেন জনবল সংকট ও এর বিন্যাসে আঞ্চলিক বৈষম্য; এর সাথে রয়েছে অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রপাতি, জবাবদিহিতা ও ব্যবস্থাপনার সংকট। তবে এটা ঠিক যে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সরকারি খাতে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা এবং তাষ্টিক এবং সামষ্টিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি অধিদফতর যথাক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, নার্সিং সেবা পরিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে। স্বাধীনতার পর হতে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রভূত কাজ করেছে। সরকার সকল জনগণ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনার বর্তমান অবস্থা বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রবীণদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শারীরিক, সামাজিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার ক্ষেত্রে টেকসই উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত (এইচএনপি) সেক্টরের মূল লক্ষ্য। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি এবং জাতীয় জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবায় গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রে এনজিওসমূহের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তারা মূলত পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য অধিক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। সম্প্রতি এনজিওসমূহ তাদের সেবার পরিধি বাড়িয়েছে এবং শহরে প্রাথমিক সেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কাজ করছে। স্বাস্থ্যসেবাকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্যবাজেট বরাদ্দ ও ব্যয়ে সকল অসমতা দূর করতে হবে; স্বাস্থ্যখাতে নিয়োজিত জনবলের সুষম বিন্যাস নিশ্চিত করতে হবে; জেলা ও উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহের সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা থাকতে হবে; স্বাস্থ্যখাতের সকল শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। বাজেটে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন; স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সকল অপচয়, দূর্নীতি দূর করতে হবে; স্বাস্থ্যবাজেট প্রণয়নে জেলা পর্যায়ে সমন্বয় এবং উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্থানীয় চাহিদার আলোকে জনঅংশগ্রহণের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অর্থমন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এবারের স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখুন। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলেছে লাগামহীন গতিতে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস নির্বাচন করতে না পারা, অলস জীবনযাপনের কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আমাদের দেশে বেশি। ধারণা করা হচ্ছে আগামী দু দশকে আমাদের দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ১.৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আমরা জানি ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য রোগ। লাইফস্টাইলে সামান্য পরিবর্তন এনে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা।