বালিকা বধূ প্রত্যুষার প্রেমিকের পক্ষে লড়বেন না আইনজীবী

বিনোদন প্রতিবেদক: ভারতীয় টেলিভিশনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘বালিকা বধূর পরিচিত মুখ বাঙালি অভিনেত্রী প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায় হত্যা মামলায় তাঁর প্রেমিক অভিনেতা-প্রযোজক রাহুল রাজ সিংয়ের পক্ষে মামলা লড়বেন না আইনজীবী। তাঁর আইনজীবী এই মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বুধবার এনডিটিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাহুল রাজের আইনজীবী নীরাজ গুপ্ত বলেন, মানবিক কারণেই আমি এই মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। আমার ধারণা, এই মামলা নিয়ে আদালতে দাঁড়ানো উচিত হবে না। একজন মক্কেলের ভালো ও মন্দ সব তথ্যই আইনজীবীকে দেওয়া উচিত। কিন্তু আমি অন্ধকারে ছিলাম। আমাকে এ বিষয়ে বাইরে (গণমাধ্যম) থেকে তথ্য জানতে হয়েছে। রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পরই মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন,  এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে অভিযোগ দায়েরের কোনো সম্পর্ক নেই। একজন আইনজীবী সব সময় এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকেন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার প্রত্যুষার মা সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই বাঙ্গুর নগর থানার পুলিশ রাহুলকে আটক করে। তবে রাহুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন তিনি পুলিশ পাহারায়। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।

রাহুল রাজের আইনজীবী নীরাজ গুপ্ত বলেছেন, গত রোববার বুকের ব্যথা ও নিম্ন রক্তচাপের কারণে রাহুলকে কান্দিভালির শ্রী সাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা এই মুহূর্তে ভালো নয়।
গতকাল প্রত্যুষার বাবা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে রাহুলের ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাহুল প্রত্যুষার পুরো জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি প্রত্যুষাকে মারধর করতেন। মা-বাবার সাথে যোগাযোগ রাখলে প্রত্যুষার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাবেন বলেও হুমকি দিয়েছিলেন রাহুল। এ কারণেই প্রত্যুষা মা–বাবাকে ছেড়ে আলাদাভাবে থাকতেন। রাহুলের নয় বছর বয়সী একটি সন্তানও আছে বলে সম্প্রতি প্রত্যুষা জানতে পেরেছিলেন। প্রত্যুষার বাবা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,  আমি মেয়েকে হারিয়েছি। আর হারানোর কিছু নেই। কিন্তু রাহুল শাস্তি না পেলে আমি শান্তি পাব না। তাঁর মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ড হওয়া উচিত। আমার মেয়ের মতো যেন অন্য কোনো মেয়েকে এভাবে চলে যেতে না হয়।’গত সোমবার প্রত্যুষার বন্ধু কাম্য পাঞ্জাবি ও বিকাশ গুপ্ত মুম্বাইতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা জানান, প্রত্যুষা ও রাহুলের সম্পর্কের মধ্যে অনেক ঝামেলা ছিল। তাঁদের অভিযোগ, প্রত্যুষা বিশ্বাস করত যে রাহুল তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং জনসমক্ষে রাহুল তাঁকে চড় মেরেছে। এ ছাড়া রাহুলের সাবেক প্রেমিকা সালোনি শর্মাও প্রত্যুষাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন।এর আগে রাহুল রাজ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছিলেন, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাস থেকে তিনি প্রত্যুষার সাথে অভিসারে যান। তিনি তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, প্রত্যুষা তাঁর স্ত্রী। যদি তিনি শুক্রবার বাসা থেকে বাইরে না যেতেন তাহলে হয়তো প্রত্যুষা বেঁচে যেতেন। তবে রাহুলের পরিবারের দাবি, প্রত্যুষা চরম আর্থিক সংকটে ছিলেন। তাঁর আত্মহত্যার পেছনে এটা একটা কারণ হতে পারে। গত শুক্রবার মুম্বাইয়ের বাড়ি থেকে প্রত্যুষার গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ অনুমান করেছিলো, প্রত্যুষা আত্মহত্যা করেছেন। পরে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়, শ্বাসরোধে প্রত্যুষার মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তোলপাড় শুরু হয়েছে বলিউডে। ‘বালিকা বধূ’র ‘আনন্দী’ কি আত্মঘাতী হলেন, নাকি তাঁকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে? কলকাতার জামশেদপুরের মেয়ে প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত শেষ সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘শ্বশুরাল সিমার কি’। রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস ৭’-এ দেখা গেছে তাঁকে।