দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের দ্বিতল ভবন নির্মাণে দুর্নীতি : ঘটনাস্থল পরিদর্শনে কর্তারা পেয়েছেন দুর্নীতির সত্যতা

 

 

দর্শনা অফিস: দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের ব্যাপক দুর্নীতির সত্যতা মিলেছে। আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশের কাবারি দিয়ে পিলার ঢালাইয়ের কাজ পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কৃষি অফিসাররা। সটকে পড়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ শ্রমিকরা। জনরোষের মুখে বেকায়দায় পড়েছেন প্রকৌশলী ও ম্যানেজার। নির্মাণ কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। চলছে তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান।

জানা গেছে, দর্শনা রেল বন্দরসহ এ অঞ্চলে কৃষিপণ্য আমদানি-রফতানিতে বেশ এগিয়ে রয়েছে। দর্শনাসহ আশপাশ এলাকার কৃষিপণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কয়েক বছর ধরে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশেষে দর্শনা পৌরভবনের পেছনে ২৯ দশমিক ৫২ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ওই জমিতে গত বছরের ১ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় ফাইটো সেনেটারি শক্তিশালী উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থয়ানে বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২শ ৭৫ স্কয়ার ফুট দ্বিতল ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃতীসন্তান হামিদুর রহমান। সেই থেকে শুরু হয় দ্বিতল ভবন নির্মাণকাজ। অভিযোগ রয়েছে, ভবন নির্মাণের আগেই নির্মাণ করা হয় সীমানা পাঁচিল। বেশিরভাগ সময় রাতের আঁধারেই নির্মাণকাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার ফার্মগেটের জয় কনস্ট্রাকশন ইন্টার ন্যাশনাল। এ কাজে বিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন রবিউল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাস। স্থানীয়রা বারবার নির্মাণ কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তা দেখতে দেয়া হয়নি। বরং স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। ইট, বালু, খোয়া, রড, রাভিস ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ভবনের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ ধরনের একটি ভবন নির্মাণকাজের কোনো প্রকার সাইনবোর্ড টাঙায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে তিমিরেই থেকে যায় নির্মাণ কাজের বরাদ্দের বিস্তারিত তথ্য ও কাজের স্বচ্ছতা। অবশেষে গত বুধবার বিকেলে নির্মাণশ্রমিকদের অগোচরে স্থানীয়রা লুকিয়ে ভবনে ঢুকে খানেকটা চমকে ওঠেন। তারা দেকতে পান দ্বিতল ভবনের পিলারগুলোতে রডের বদলে দেয়া হয়েছে বাঁশের কাবারি। পাঁচিলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত পুরোনো ইট দিয়ে। ঢালাই কাজে ইটের খোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে সুরকি ও রাভিশ। এ ধরনের অভূতপূর্ব কারচুপির কথা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নির্মিতব্য ভবন দেখতে কৌতূহলী জনতার ভিড় জমে। পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক বুঝে ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে সটকে পড়েন নির্মাণকাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সুব্রত বিশ্বাস ও ম্যানেজার জেমস কসট্রাসহ নির্মাণশ্রমিকরা। রাগে-ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে এলাকাবাসী। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার প্রক্রিয়া চালিয়ে ব্যর্থ হয় স্বার্থান্বেষী একটি মহল। রাতেই কাবারি ঢালাইয়ের খবর পান বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। তিনি তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসারদের নিদের্শ দেন। তারা যেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেই মোতাবেক গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল হওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি অফিসার নির্মল কুমার দে, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো. রোকুনুজ্জামান ও দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের ইনচার্জ কামরুন নাহার। কর্তকর্তারা ভবনের বিভিন্ন পিলার ও পাঁচিল ভেঙে অভিযোগের সত্যতা পান। কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছুনের আগেই রাতের আঁধারে বাঁশের কাবারি ও নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। সকালে স্থানীয়দের জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও ম্যানেজরকে। কর্মকর্তারা ভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। যে কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানালে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের নির্মাণাধীন দ্বিতল ভবনের মধ্যে ইতোমধ্যেই বাউন্ডারি পাঁচিল, বিল্ডিং, গ্যারেজ, রাস্তা, প্রধান ফটক ও গার্ডশেড নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রশ্ন উঠেছে, কী দিয়ে এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে? তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর আগে যেসব ভবন নির্মাণ করেছে সেগুলোও নতুন করে খতিয়ে দেখতে হবে। আসলে কি সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে যাচ্ছে? এদিকে বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের মহাপরিচালক চুয়াডাঙ্গার কৃতীসন্তান হামিদুর রহমান গতরাতেও মোবাইলফোনে জানিয়েছেন, দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অচিরেই তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।