আলমডাঙ্গায় এডিশনাল এসপির নামে বেকারিতে দুই দারোগার উৎকোচ দাবি

 

ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানার ভয় : মার্ডার কেসে ফাঁসানোর হুমকি : শহরজুড়ে তোলপাড়

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা শহরে দুটি বেকারিতে এডিশনাল এসপির নামে উৎকোচ দাবি করার ঘটনায় শহরজুড়ে দিনব্যাপি তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। আলমডাঙ্গা থানা ও খাসকররা ক্যাম্পের ২ দারোগা বেকারি মালিকদ্বয়ের নিকট গিয়ে এডিশনাল এসপির পরিচয় দিয়ে জনৈক ব্যক্তিকে ফোন ধরিয়ে দিলে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দাবি করেন। এ উৎকোচ দাবির পর ২ দারোগা বার বার ওই দুই বেকারিতে আসা-যাওয়া শুরু করেন। উৎকোচ না পেয়ে এডিশনাল এসপি পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে একই মোবাইল থেকে কল করেন। এ সময় দুটি মার্ডার কেস দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়া হয় বেকারি মালিক দুজনকে।

জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার আলমডাঙ্গার খাসকররা ফাঁড়ি পুলিশের আইসি হাবিলদার হাফিজ বেলা ১১টার দিকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূর থেকে আলমডাঙ্গা শহরের চারতলা মোড়ে অবস্থিত মডার্ন বেকারিতে ছুটে যান। হাবিলদার হাফিজ বেকারি মালিক আনোয়ার হোসেনকে জানান, এডিশনাল এসপি স্যার আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন। আপনি তার মোবাইল নম্বর নিয়ে কথা বলুন। এ সময় বেকারি মালিক আনোয়ার হোসেনকে ০১৭১৫৮০০৩৪৬ নম্বর মোবাইলফোনে কল করে এডিশনাল এসপির সাথে কথা বলার জন্য বলেন। বেকারি মালিক আনোয়ার হোসেন ওই মোবাইলে রিং দিলে এডিশনাল এসপি পরিচয়দানকারী ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করেন প্রতিদিন কী পরিমাণ ময়দা ব্যবহার করেন, আর কয়টা এবং কোথায় কোথায় বেকারি রয়েছে? এরই মধ্যে ৩/৪ মিনিট অতিবাহিত হলে বেশ কয়েকজন কনস্টেবলসহ সেখানে আবির্ভূত হন আলমডাঙ্গা থানার এস আই রফিক। তারপরে এডিশনাল এসপি পরিচয়দানকারী অজ্ঞাত ব্যক্তি এস আই রফিকের সাথে মোবাইলে কথা বলা শুরু করেন। এসআই রফিক মোবাইলে কথা বলা শেষ করে আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে তার বেকারির অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। সেখানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের অভিযোগ তুলে কিছু কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে বেকারি মালিক আনোয়ার হোসেনকে সতর্ক করে দেয়ার সুরে বলেন, ‘আপনি খুব বড় একটা বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। কী বিপদ তা জিজ্ঞেস করলে বলেন, যখন পড়বেন তখনই বুঝবেন। এরই মধ্যে হাবিলদার হাফিজ আলমডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুত অফিসের সামনে অবস্থিত মডার্ন বেকারির অন্য আরেকটি কারখানায় ছুটে যান। সে কারখানার মালিক মিলন হোসেন জানায়, হাবিলদার হাফিজ তাকেও একইভাবে এডিশনাল এসপি পরিচয়দানকারী ব্যক্তির সাথে মোবাইলফোনে কথা বলিয়ে দেন। এডিশনাল এসপি পরিচয়দানকারী অজ্ঞাত ব্যক্তি সে সময় তাকে জানায়, ডিসি অফিসে লিস্ট করা হয়েছে যে আপনার বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। আমাদের সন্তুষ্ট করলে ওই লিস্ট থেকে নাম কেটে দেয়া হবে। এ সময় মিলন হোসেন বলেন, তাদের বেকারি সমিতি আছে। তার সভাপতিকে বাদ দিয়ে তিনি কিছু করতে পারবেন না। এই বলে মিলন হোসেন বেকারি সমিতির সভাপতি আলমডাঙ্গা শহরের চারতলা মোড়ে অবস্থিত মডার্ন বেকারির মালিক আনোয়ার হোসেনকে ঘটনাটি জানালে তিনি হাবিলদার হাফিজকে পুনরায় তার দোকানে পাঠিয়ে দিতে বলেন। এ ঘটনাবধি এসআই রফিক আনোয়ার হোসেনের বেকারিতেই অবস্থান করছিলেন। আনোয়ার হোসেন নিজেকে আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি পরিচয় দিলে এসআই রফিক আচরণ পরিবর্তন করেন। এডিশনাল এসপি পরিচয়দানকারী অজ্ঞাত ব্যক্তি এ সময় আনোয়ার হোসেনকে জানান আধঘণ্টা পরে কথা বলছি। এরপরে আনোয়ার হোসেন পৌরসভায় ছুটে যান ঘটনাটি পৌর মেয়র হাসান কাদির গনুকে জানাতে। সে সময় এডিশনাল এসপি পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবার আনোয়ার হোসেনের মোবাইলে ফোন দেন। নাম কী এবং তিনি কোন জেলার এডিশনাল এসপি জিজ্ঞেস করলে এক পর্যায়ে নাম তোফায়েল আহমেদ যশোরের এডিশনাল এসপি বলে পরিচয় দেন। তিনি বেশ হম্বিতম্বি করলে আনোয়ার হোসেনও বেশ কড়া স্বরে জবাব দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এডিশনাল এসপি পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আনোয়ার হোসেনকে দুটি মার্ডার কেস দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। আনোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় থানায় তিনি জিডি করতে চাইলেও থানার ওসি (তদন্ত ) তাকে নিবৃত করেন এই বলে যে, বিষয়টি ইতোমধ্যে তারা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। এ দায়িত্ব পুলিশের। এ ঘটনায় দিনব্যাপী আলমডাঙ্গা শহরজুড়ে তোলপাড় চলে।

এ দিকে, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাটি প্রতারকচক্রের বলে দাবি করে। দুপুরে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী রাসেল সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় বলেন, ঘটনাটি একটি চক্রের। এর সাথে এসআই রফিক কিংবা পুলিশ জড়িত নয়।

তবে পুলিশের এ যুক্তি মোটেও মানতে রাজি নন শহরের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। কোন যুক্তিতে প্রতারকচক্র ২/৩ জন দারোগাকে সম্পৃক্ত করে এ প্রতারণা করতে যাবে? এমন প্রশ্ন তাদের। বিষয়টি খতিয়ে দেখে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে আলমডাঙ্গার সুধীমহলের দাবি।