বউয়ের জন্য বিমান ছিনতাই : শ্বাসরুদ্ধকর কয়েক ঘণ্টা

 

ঘটনার আড়ালে মিসরে নারীবন্দিদের মুক্তির দাবিও থাকতে পারে

মাথাভাঙ্গা মনিটর: সন্ত্রাসী হামলা কিংবা মুক্তিপণের ঘটনা নয়, বউকে দেখার জন্য বিমান ছিনতাই করেছেন একজন মিসরীয়! গতকাল মঙ্গলবার সকালে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কায়রোগামী ইজিপ্ট এয়ারের ১৮১ নম্বর ডমেস্টিক ফ্লাইট সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করাতে বাধ্য করে ছিনতাইকারী। বিমানে বোমা হামলার হুমকি দেয়ায় পাইলট বাধ্য হন বিমানের গতিপথ পরিবর্তন করতে। তবে ছিনতাইকারীর উদ্দেশ্য নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়েছে। মিশর তথা ইজিপ্ট এয়ারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছিনতাই হওয়া বিমানে ৫৬ যাত্রী, ছয় ক্রু এবং একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন। ওই বিমানের পাইলট ওমর আল-জামালের বরাত দিয়ে মিসরের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের মধ্য থেকেই একজন উঠে এসে বিস্ফোরক বেল্ট দেখিয়ে হুমকি দেয় এবং সাইপ্রাসের লারনাকায় নামতে বাধ্য করে। অবশ্য সেই ছিনতাইকারীর বেল্টে সত্যিই বিস্ফোরক আছে কি-না তা নিশ্চিত করতে পারেননি সাইপ্রাসের কর্মকর্তারা। সাইপ্রাস বিমানবন্দরে অবতরণের পর চার বিদেশিসহ সাতজনকে জিম্মি করে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে কয়েক ঘণ্টার চরম উত্তেজনা ও উদ্বেগের পর ছিনতাইকারীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বিমান ছিনতাই জিম্মি নাটকের অবসান ঘটে। এদিকে ছিনতাইকারীর উদ্দেশ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। তাই তার আসল উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। গার্ডিয়ানে বলা হয়েছে, ছিনতাইকারীর নাম সেইফ আলদিন মুস্তাফা। তিনি সাইপ্রাসে তার সাবেক স্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য এ কাজ করেছেন। স্ত্রীর সাথে মুস্তাফার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তবে অন্য সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, মিসরে নারীবন্দিদের মুক্তির দাবিতে তিনি বিমান ছিনতাই করেছেন। এসব তথ্যের কোনোটিই বিশ্বাসযোগ্য কোনো সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি। বিমানে জিম্মি নাটকের অবসানের বিষয়টি সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের টুইটার পেজে নিশ্চিত করে। টুইটে বলা হয়, সমাপ্ত। ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়েছে।

সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকস আনাস্তাসিয়াদেসকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি হেসে জবাব দেন, একজন নারী এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, ওই ছিনতাইকারী একটি চিঠি ছুড়ে দেন। সেটি আরবি ভাষায় লেখা। সেটি তিনি তার সাবেক স্ত্রীকে দিতে বলেন। বলা হচ্ছে, ছিনতাইকারীর সাবেক স্ত্রী সাইপ্রাসে থাকেন। বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় সাইপ্রাসে আশ্রয় দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ছিনতাইকারী। সেই সাথে তার দাবি উপস্থাপনে সুবিধার জন্য একজন অনুবাদকও চান তিনি। সাইপ্রাসের একটি টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়, বিমানবন্দরে একজন নারীকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই নারীর সাথে এক শিশুও ছিলো। খবরে বলা হয়, ছিনতাইকারী স্ত্রীর সাথে দেখা করা ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সাথেও দেখা করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া মিসরের কারাগারে আটক নারীদেরও মুক্তি দাবি করেছিলেন। অপর একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ছিনতাইকারীর নাম ইবরাহিম আবদেল তাওয়াব সামাহা। তিনি আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয়েছে। ইবরাহিম আবদেল তার বিরুদ্ধে আনা ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস আনাস্তাসিয়াদেস বলেন, মিসরের বিমানটি সন্ত্রাসবাদের উদ্দেশে ছিনতাই করেননি বরং ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কাজটি করেছেন। ওই ছিনতাইকারীকে প্রেমরোগগ্রস্ত রোমিও বলে আখ্যা দেন তিনি। সাইপ্রাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিনতাইকারীকে মানসিক রোগী বলে অভিহিত করেছেন। আর ছিনতাইকারীর এ ধরনের উদ্দেশ্যের কথা জানার পর তাকে নির্বোধ বলে উল্লেখ করেছে মিসর কর্তৃপক্ষ।