ইউপি নির্বাচন : ভোট বর্জনের ভাবনায় বিএনপি

 

স্টাফ রিপোর্টার: দ্বিতীয় ধাপেও কারচুপি, অনিয়ম ও সহিংস ঘটনা অব্যাহত থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের কথা ভাবছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে আগামীকাল ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশেই চলছে নজরদারি। অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে। ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপর নতুন করে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আলোচনা করেছেন। তিনি নির্বাচনের ওপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম ধাপের মতো পরের ধাপগুলোতে একই ধারা চলতে থাকলে হাইকমান্ড নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিতে পারেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতা।

ইউপি নির্বাচনের সমন্বয়ক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা জেনেও আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কারণ, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি সব সময় নির্বাচনের পক্ষে। প্রথম দফা নির্বাচনের পর আবারও প্রমাণ হলো আওয়ামী লীগের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, অতীতে ইউপি নির্বাচন ছিলো উৎসবের অংশ। কিন্তু আওয়ামী লীগ আজ সেই উৎসবকে আতঙ্কে পরিণত করেছে।  প্রথম ধাপে সারা দেশে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়, সাধারণ মানুষও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। আগামী ধাপের নির্বাচনগুলোতে অনিয়ম, কারচুপি, সন্ত্রাস অব্যাহত থাকলে দলের হাইকমান্ড বিষয়টি ভেবেও দেখতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে দ্বিতীয় অধিবেশনে তৃণমূল নেতারা বলেন, ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। তারা বলেন, বিগত আন্দোলনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এমনিতেই মামলা-হামলায় দিশেহারা। নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ফের নির্যাতন শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। তারা কীভাবে নির্বাচন করবেন বিষয়টি আগেই ভেবে দেখা উচিত ছিলো। তৃণমূল নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ও বর্তমান ইসির অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জেনে ইউপিতে যেতে চাইনি। কিন্তু আপনারা (তৃণমূলের) আগ্রহ দেখিয়েছেন, অংশ নিতে চেয়েছেন বলেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ইউপি নির্বাচনের মনিটরিং সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, প্রথম ধাপের ভোট ডাকাতির পর নির্বাচন সম্পর্কে তৃণমূলের আর কোনো আগ্রহ নেই। ইউপি নির্বাচনের কারণে নতুন করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা ও নির্যাতন নেমে এসেছে। এরপরও আমরা আগামীকালের নির্বাচন দেখব। দ্বিতীয় ধাপেও যদি একই ঘটনা ঘটে তাহলে দল নির্বাচনে না থাকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাও করতে পারে।

সূত্র জানায়, ইউপি নির্বাচনে শুরুতে তৃণমূলের ব্যাপক আগ্রহের কারণেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। এই মুহূর্তে রাজপথে কোনো আন্দোলন না থাকায় নির্বাচনে অংশ নেয়াকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এতে তৃণমূলও উজ্জীবিত এবং চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে ধারণা ছিল তাদের। প্রথম ধাপের আগে সেই ধারণা অনেকটা সত্যিও হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই চিত্র পাল্টে যায়। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ক্ষমতাসীনরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। কোথাও কোথাও প্রার্থীদের এলাকাছাড়াও করা হয়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় প্রার্থী এমনকি সমর্থকদের বাড়িঘরও। প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগের রাত থেকেই প্রায় সব কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেয় ক্ষমতাসীনরা। পোলিং এজেন্ট দূরে থাক অনেক এলাকায় প্রার্থী নিজেই ভোট দিতে পারেনি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই আর প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নির্বাচন করা দূরে থাক নিজেদের গা বাঁচাতে অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপে প্রার্থী সঙ্কট আরও বেড়ে যায়। প্রথম ধাপে ১৯, দ্বিতীয় ধাপে ৩৩টি ইউপিতে কোনো প্রার্থী পায়নি বিএনপি। তৃতীয় ধাপে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২টিতে। তৃণমূল থেকে তালিকা না পাঠালেও কেন্দ্র এই ব্যাপারে কঠোর কোনো নির্দেশনাও দেয়নি। তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, হামলা-মামলা নির্যাতন এবং নানা কারণে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটাই দুর্বল। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না। কিন্তু বিএনপি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশ্বাস করে বলেই তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনরা যেভাবে ভোট ডাকাতির মহোৎসব করছে সেখানে বিএনপির নির্বাচনের মাঠে থেকে কতোটা লাভ তা বিবেচনার দাবি রাখে। বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।