আলমডাঙ্গার অধিকাংশ সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না : আইন থাকলেও হয় না প্রয়োগ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার অধিকাংশ সরকারি অফিসেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। এমনকি জাতীয় দিবসগুলোতেও ঔদ্ধত্যের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা রীতিমতো ক্ষমার অযোগ্য এ ঊন্নাষিকতা প্রদর্শন করা হয়ে থাকে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, উপজেলা সমাজসেবা অফিস, উপজেলা মৎস্য অফিস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, বিআরডিবি, একটি বাড়ি একটি খামার, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, সমবায় অফিস, উপজেলা মহিলা অধিদফতরসহ প্রায় সকল সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। এমন কি জাতীয় দিবসগুলোতেও না। গত ২৬ মার্চেও বেশিরভাগ অফিসে এ বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো। অথচ বেশিরভাগ সরকারি অফিসের সামনেই পতাকা উত্তোলনের বেদী বা স্ট্যান্ড তৈরি করা রয়েছে। সে স্ট্যান্ড বা বেদীগুলো শূণ্য পড়ে থাকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের শূণ্য এ স্ট্যান্ডগুলো যেন প্রতিনিয়ত শাপান্ত করে চলেছে আমাদের বাঙালি জাতির স্বাধীন অস্তিত্বকে, আমাদের সার্বোভৌমত্বকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী বলেন,  জাতীয় পতাকা মানেই শুধু এক টুকরা কাপড় নয়, এ পতাকা আমাদের গৌরবের প্রতীক, আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিচয়। আমাদের জাতীয়তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। অনেক রক্তের দামে কেনা এ পতাকা। ৩০ লাখ শহীদ ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ পতাকার  অবমাননা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।

আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রায় সকল সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে অনেক কর্মকর্তাই আবার রীতিমতো ঔদ্ধত্যে প্রকাশ করে জাতীয় পতাকা প্রতিদিন উত্তোলনের প্রয়োজন নেই বলে মনগড়া যুক্তি দেখিয়েছেন। যদি কেউ অবমাননা করে, তাহলে তাকে পেতে হবে শাস্তি। জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে। জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০) এ বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন। তাই সব সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভবনে সব কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে। এছাড়া কিছু অনুষ্ঠান উপলক্ষে যেমন ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোনো দিবসে বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রাঙ্গণে এবং কনস্যুলার কেন্দ্রগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া শহীদ দিবস ও জাতীয় শোক দিবসে বা সরকার প্রজ্ঞাপিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকার বিধান রাখা হয়েছে।

কেন আপনার অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে দেখা যায় না? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা কৃষি অফিসার একেএম হাসিবুল হক বলেন- তিনি কিছুদিন বাইরে অবস্থান করার কারণে পতাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ব্যাত্যয় ঘটতে পারে। তাছাড়া জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় বলে তিনি দাবি করেছেন।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শামীমুজ্জামানকে কেন তার অফিসে প্রতিদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বেশ ঔদ্ধত্যের স্বরে বলেন, প্রতিদিন পতাকা উত্তোলন করা হয় না তো কী হয়েছে?          উপজেলা মৎস্য অফিসার ময়নুল ইসলামকে একই প্রশ্ন করলে তিনি এমনটি হওয়া উচিত হয়নি স্বীকার করে বলেন, তিনি ৬ মাসের প্রশিক্ষণে বাইরে অবস্থান করছেন। তারপরও তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন যাতে ভবিষ্যতে আর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে গাফিলতি না থাকে।

উপজেলা প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জী বলেন, তার ডিপার্টমেন্টের প্রধান উপজেলা চেয়ারম্যান। তাছাড়া উপজেলা পরিষদের ভবনের এক্সটেনশন পার্টে তার অফিস। সে ক্ষেত্রে তার অফিসের জন্য পৃথকভাবে পতাকা উত্তোলন আবশ্যক না বলে মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে শহরে সমালোচনাসহ সুধীমহলকে হামেশাই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।