একদিন পরেই মুজিবনগরের ৪ ইউপিতে নির্বাচন : কে হাসবেন শেষ হাসি

একদিন পরেই মুজিবনগরের ৪ ইউপিতে নির্বাচন : কে হাসবেন শেষ হাসি

মাজেদুল হক মানিক/শেখ শফি: মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে প্রার্থীরা শেষ মুর্হূতের প্রচারণায় ব্যস্ত। ভুল-ভ্রান্তি ও বিরোধ মেটাতে এখনো ব্যস্ত প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। দলের অভ্যন্তরের ছাইচাপা আগুন নেভাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন প্রার্থী ও দলীয় নেতৃবৃন্দ। অপরদিকে কেউ কেউ প্রস্তুত প্রতিশোধ নিতে আবার কেউ প্রস্তুত দলীয় ও ব্যক্তিগত সম্মান রক্ষায় মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। এমন পরিস্থিতিরি মধ্যদিয়ে ভোট প্রদানের সময় ঘনিয়ে আসছে। ভোটাররাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে।

বাগোয়ান ইউপি: বাগোয়ান ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়ুব হোসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। তিনি লড়ছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মানজারুল ইসলাম লড়ছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। বিএনপির শরিক দল জামায়াত থেকে লড়ছেন উপজেলা জামায়াতের বাইতুল মাল সম্পাদক সেলিম হোসেন খান। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২ প্রার্থী থাকায় স্বাভাবিকভাবেই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন আ.লীগের একক প্রার্থী। তবে শেষ পর্যন্ত আ.লীগ-বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। এবারে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৯ হাজার ১৪৯।

বিগত ২০১১ সালের নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থী আয়ূব হোসেন ১১ হাজার ৬৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম বিএনপি সমর্থীত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৭২৪ ভোট। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কুদ্দস পেয়েছিলেন ১ হাজার ৪৬ ভোট। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিলো ২৫ হাজার ৮১২। ভোট পোল হয়েছিলো ২৩ হাজার ১৪৪টি।

গত নির্বাচনের মতই লড়াই মহাজনপুর ইউপিতে: মহাজনপুর ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন মিলু নৌকা ও  জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি, জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবিব সোনা ধানের শীষ মূল প্রতিদ্বন্দীতায়। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিসকিন মহাম্মদ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী তোফাজ্জেল হোসেন মাঠে রয়েছেন। তবে মূলত লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। বিদ্রোহী প্রার্থীরা উভয় দলের জন্য কিছুটা সমস্যা হলেও প্রতীক দেখেই দলীয় ভোটাররা ভোট দিবেন বলে আশা করছেন প্রার্থীরা। আমাম হোসেন মিলু তার জায়গা ধরে রাখতে যেমনি মরিয়া তেমনি গত নির্বাচনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার বিজয়ী হতে মরিয়া আহসান হাবীব সোনা।

মহাজনপুর ইউপিতে এবার মোট ভোটারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৮৮। গত নির্বাচনে মোট ১২ হাজার ৫২৮ জন ভোটারের মধ্যে পোল হয় ১১ হাজার ৫৮৭ টি। আ.লীগ প্রার্থী আমাম হোসেন মিলু ৬ হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন। বিএনপি প্রার্থী আহসান হাবীব সোনা পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৭৩৪ ভোট।

এবারো চেয়ারম্যান প্রার্থী বেশি দারিয়াপুর ইউপিতে: দারিয়াপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে এবারো সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী রয়েছেন। গত নির্বাচনের চেয়ে এক জন বেড়ে এবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ জন। বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাড. কলিম উদ্দীন আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনছারুল ইসলাম কাটু ধানের শীষ। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আওলাদ হোসেন ছাড়াও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৌফিকুর বারী বকুল ও হাশেম আলী, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আসাদুল হক এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) মনোনীত প্রার্থী মওলাদ হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ ইউপিতে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় কার সাথে কার প্রতিদ্বন্দিতা হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না ভোটাররা। দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেতাদের জোর প্রচেষ্টাও চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত কে হচ্ছেন বিজয়ী এবং কে হচ্ছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দী তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভোটের দিন পর্যন্ত।

গত নির্বাচনে আ.লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাড. কলিম উদ্দীন ৩ হাজার ২৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী আনছারুল হক কাটু ২ হাজার ৯৭৯ ভোট পান। বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থীত প্রার্থী জারজিস হোসাইন পেয়েছিলেন ২ হাজার ৫০৩ ভোট এবং আ.লীগ সমর্থীত প্রার্থী ওয়াজেদ আলী পেয়েছিলেন ২ হাজার ৩০৯ ভোট। এবার মোট ভোটারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৪৭। গত নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিলো ১৩ হাজার ১৩৭।

মোনাখালী ইউপি: মোনাখালী ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফা গাইন নৌকা, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আজিম উদ্দীন গাজী ধানের শীষ, আ.লীগের বিদ্রাহী প্রার্থী মফিজুর রহমান ও বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মোল্লা এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী খান জাহান আলী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক বিছিন্ন থাকার অভিযোগে মনোনয়ন পাননি বর্তমান চেয়ারম্যান। তবে তার জন সমর্থন রয়েছে কি-না তা প্রমাণ করতেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানান তার সমর্থকরা। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আ.লীগ-বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেও আ.লীগের জন্য বাধা হতে পারে মফিজুর রহমান।

অন্যদিকে বিএনপির জন্যও কাল হতে পারে জামায়াত প্রার্থী। মোনাখালী গ্রামে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। মফিজুর রহমান মোনাখালী গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় গ্রামের সিংহভাগ ভোট টানার চেষ্টায় মরিয়া। তাই মোনাখালী গ্রামের ভোটারদের ওপর ফলাফল অনেকাংশে নির্ভর করছে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

গত নির্বাচনে ১৩ হাজার ৫৪৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ১২ হাজার ৪৫২ টি। আ.লীগের বিদ্রোহী শফিকুল ইসলাম মোল্লা ৩ হাজার ২৯৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থী ইসমাইল হোসেন পান ২ হাজার ৫২৩ ভোট। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী ফজলুল হক গাজী পান ২ হাজার ৪৯২ ভোট এবং বিএনপি সমর্থিত হামিদুল ইসলাম মালিথা পেয়েছিলেন ২ হাজার ২৪৭ ভোট। এবার  মোট ভোটারের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৬২।

এদিকে প্রধান ২ দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও তারা ভোটের মাঠে তেমন সুবিধা করতে পারবেন না। যেহেতু কেন্দ্র থেকে দল মনোনয়ন দিয়েছে তাই কর্মী ও ভোটাররা ভুল পথে হাটবে না।

দেশে এই প্রথম স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়া হয়েছে। তাই অন্যবারের নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন ব্যতিক্রম। দল মনোনীত প্রার্থীরা তাই স্বাভাবিক ভাবেই সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছেন। এর পরেও সাধ্যমত ভোটের মাঠে কাজ করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর। ভোটাররা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে আত্মীয়তার বন্ধন প্রার্থীদের জয়ে বড় ভূমিকা রাখে। তাছাড়াও প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ, জনসম্পৃক্ততা ও এলাকার বর্তমান প্রেক্ষাপট ভোটের জয় পরাজয়ে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত। তাছাড়া দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা বিরোধ জয়-পরাজয়েও ভূমিকা রাখতে পারে। সব মিলিয়ে যে প্রার্থী ভোটের মাঠে সব প্রতিকূল পরিবেশ অনুকূলে নিতে পারবেন তিনিই হাসবেন শেষ হাসি, এমনটাই মন্তব্য ভোটার ও ভোট সংশ্লিষ্ঠদের।

নির্বাচনের একদিন বাকি থাকায় ভোট গ্রহণের জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন ভোট গ্রহণ সংশ্লিষ্ঠরা। সুষ্ট-নিরপেক্ষ ও সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে কোনো কিছুর ক্রুটি নেই বলে জানালেন জেলা নির্বাচন অফিসার রোকনুজ্জামান।