স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় প্রধান কার্যালয় থেকে জব্দ করা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ফরেনসিক পরীক্ষা করতে সিআইডিকে অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহজনক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেশত্যাগের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশের সবকটি বিমানবন্দর, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অন্যদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মার্কিন ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ঘটনাকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চরম গাফিলতি বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির পর দেশের ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগ ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় যেসব কর্মকতা কাজ করবেন তাদের পাসপোর্টের কপি সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। রিজার্ভের অর্থ চুরি ঘটনায় বাংলাদেশের কারা জড়িত তা শনাক্ত করা গেলেই টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ চুরির ঘটনায় কর্মীরা জড়িত থাকায় রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে। চীনা ২ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির দায়ে ফৌজদারি অভিযোগ এনে মামলা করেছে ফিলিপাইনের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)।
সন্দেহজনক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা: গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮০০ কোটি টাকা অর্থ লোপাটের ঘটনায় অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। সিআইডির পাশাপাশি ৱ্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ও পুলিশের বিশেষ শাখাসহ (এসবি) অন্য গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। এসব তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনও (সুইফট) তদন্ত শুরু করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ কোটি ডলার চুরি ঘটনায় ব্যাংকটির সন্দেহভাজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেশত্যাগের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশের সবকটি বিমানবন্দর, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে চাঞ্চল্যকর এ মামলা তদন্তে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গভর্নর থেকে শুরু করে সব থেকে নিচু স্তরের কর্মচারী পর্যন্ত প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত প্রায় ৮ হাজার স্টাফ এর আওতায় রয়েছেন। সিআইডির সবুজ সঙ্কেত ছাড়া কেউ দেশের বাইরে যেতে পারবেন না বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।
জব্দ হার্ডডিস্কের ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি পেলো সিআইডি: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় প্রধান কার্যালয় থেকে জব্দ করা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ফরেনসিক পরীক্ষা করতে সিআইডিকে অনুমতি দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান এই আদেশ দেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপকমিশনার এ এইচ এম কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য জব্দ করা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক পরীক্ষা করার অনুমতি চেয়ে সিআইডি আদালতে আবেদন করে। আদালত সিআইডির এই আবেদন মঞ্জুর করে পরীক্ষা করার অনুমতি দেন।
অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে গভর্নর: বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর ফজলে কবির গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। তারা প্রায় ১ ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। নতুন গভর্নরের যোগ দেয়ার পর এটা ছিলো অর্থমন্ত্রীর সাথে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ। বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বা গভর্নর কেউ কোনো কথা বলেননি। গত শনিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে ফজলে কবির বিকেলে অর্থমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। পরদিন রোববার তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে একই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে যোগ দেন। এর আগে তিনি ড. ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে অর্থমন্ত্রীর বাসভবনে দেখা করেন।
মামলার পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী নিয়োগ: নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকারদের হাতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার খোয়া যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তের খবর জানা যাচ্ছে। গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থার এক প্রতিবেদনে মামলা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদনে কোনো মামলা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা কিংবা আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। প্রতিবেদনে মার্কিন এক কংগ্রেস সদস্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, চোরেরা কীভাবে ফেডারেল রিজার্ভের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিলো তা নিয়ে একটি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে একটি চিঠি দিয়ে এই দাবি জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলীয় কংগ্রেস সদস্যা ক্যারোলিন ম্যালোনি। চিঠিতে ম্যালোনি লিখেছেন, দুর্বৃত্তরা কীভাবে ব্যাংকের নিরাপত্তা সুরক্ষা পাশ কাটাতে পারল একটা বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে সেটা আমাদের জানা দরকার। এর মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হ্যাকার ও সাইবার অপরাধীদের ঠেকানোর জন্য এমন একটি মানদণ্ড ঠিক করতে পারবে যাতে করে নিউইয়র্ক ফেডের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মতো ঘটনা ভবিষ্যতে আর না ঘটে। তিনি বলেন, তিনি ফেডারেল রিজার্ভে একটি একান্ত বৈঠক চান যেখানে ব্যাংক কর্মীদের জিজ্ঞাসা করা হবে বিদেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে সুইফট মেসেজিং নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করা ঠিক হচ্ছে কিনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। দিনভর অপেক্ষার একপর্যায়ে ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের (ইআরএফ) সহযোগিতায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়। রিজার্ভ চুরি ও তা চেপে রাখায় সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পদে পরিবর্তনের পর দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সকাল থেকে সাংবাদিকরা কোনোভাবেই ঢুকতে পারেনি। দুপুরে ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর সাথে ইআরএফের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বৈঠক করেন।
প্রসঙ্গত কয়েক দিন আগে থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকটি বিভাগে সংবাদকর্মীদের যাতায়াত বন্ধ করা হয়। এরপর গতকাল সব বিভাগের জন্য এই কড়াকড়ি দেয়া হয়। সাংবাদিকদের প্রবেশ আটকে এখন সেখানে মিডিয়া সেন্টার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা সাংবাদিকদের বলেন, অচিরেই বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি মিডিয়া সেন্টার খোলা হবে। আমরা সেখানেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবো। সাংবাদিকদের কিছু জানার থাকলে বা কোনো বক্তব্য প্রয়োজন হলে আগে থেকে আমাদের অবহিত করতে হবে। আমরা পরে সে বিষয়ে বক্তব্য দেবো। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলে জানান তিনি। পরবর্তী সময়ে গভর্নরের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিকেলের মধ্যেই এ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার আশ্বাস দেন।
ব্যাংকের ট্রেজারি কর্মকর্তার পাসপোর্টের কপি সংরক্ষণের নির্দেশ: রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির পর দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সবগুলো ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্ট সবাই। তারই অংশ হিসেবে এখন থেকে ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগ ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় যেসব কর্মকতা কাজ করবেন তাদের পাসপোর্টের কপি সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। গতকাল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রতিনিধিদল নতুন গভর্নরের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ নির্দেশ দেন।
সাক্ষাৎশেষে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এসেছিলাম। আমাদের ভালো আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গভর্নর ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হতে বলেছেন। যারা ট্রেজারি বিভাগ ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে কাজ করে তাদের পাসপোর্টের কপি ও বিস্তারিত পরিচয় সংরক্ষণের জন্য বলেছেন। একই সাথে এসব বিভাগে জনবল পদায়নের (পোস্টিং) ক্ষেত্রে জেনে-বুঝে বিশেষভাবে খোঁজখবর নেয়ার কথা বলেছেন। এটিএম জালিয়াতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে, আর হবে না। অনেকের পানিশমেন্ট হয়ে গেছে, অনেকের হবে। এতে আমরা ১০০ ভাগ না হলেও সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছি।
অর্থ ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল: রিজার্ভের অর্থ চুরি ঘটনায় বাংলাদেশের কারা জড়িত তা শনাক্ত করা গেলেই টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এমনটাই মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, আন্তঃদেশীয় আইনি সহায়তার মাধ্যমে, ওই অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। তবে তার আগে অর্থ ফ্রিজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, দুটি উপায়ে রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব। এ জন্য প্রথমে দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে, এ ঘটনার সাথে বাংলাদেশি কারা জড়িত। এর পর আন্তঃদেশীয় আইনি সহায়তায় টাকা ফেরাতে কাজ শুরু করতে পারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। টাকাগুলো কোথায় রয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া গেলে ফ্রিজ করে দেয়ার আবেদনও জানান তিনি। এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে বললেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় অ্যাটর্নি জেনারেলের কণ্ঠেও সেই বিষাদের সুর। বললেন চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার সত্যিই কঠিন।
অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ছুটিতে আরসিবিসি ব্যাংকের সিইও: বাংলাদেশে রিজার্ভের অর্থ পাচারের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এবার দীর্ঘদিনের ছুটিতে গেলেন ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন-আরসিবিসি ব্যাংকের প্রধান লরেনজো তান। ব্যাংকটির পরিচালকদের বোর্ড সভায় এ ছুটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির প্রথম দু দফা শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ পাচারের ঘটনায় আরসিবিসির প্রধান লরেনজো তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন ব্যাংকটির জুপিটার শাখার সদ্য বরখাস্ত ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতো। আগামী ২৯ মার্চ এ ঘটনায় সিনেটের ব্লু রিবন কমিটিতে তৃতীয় দফা শুনানির অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ আরসিবিসি ব্যাংকের: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ চুরির ঘটনায় কর্মীরা জড়িত থাকায় রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে ব্যাংকটি বলেছে, তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে যেসব দুর্বলতা রয়েছে তা কাটিয়ে আরো বেশি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে তারা। এ ব্যাপারে সিনেট কমিটি এবং মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিলের যে তদন্ত চলছে, তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে রিজাল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গতকাল ফিলিপাইনের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) দুঃখ প্রকাশ করেছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে যেসব দুর্বলতা রয়েছে তা কাটিয়ে আরো বেশি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে আরসিবিসি। এ ব্যাপারে সিনেট কমিটি এবং মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিলের যে তদন্ত চলছে, তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে রিজাল ব্যাংক।
চীনা ২ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা: চীনা ২ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির দায়ে ফৌজদারি অভিযোগ এনে মামলা করেছে ফিলিপাইনের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)। ওই দুই ব্যবসায়ী হলেন- চীনা একটি ক্যাসিনো অপারেটর সু ওয়েইকাং এবং কাগাইয়ানভিত্তিক রেস্তোরাঁর মালিক কাম সিন ওং (যিনি কিম ওং নামেই বেশি পরিচিত)। আরসিবিসি প্রধান কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে মঙ্গলবারই বরখাস্ত করা হয়েছে আরসিবিসির জুপিটার শাখা ম্যানেজার দেগুইতো ও তার ডেপুটি অ্যানজেলা তোরেসকে। ব্যাংকের লিগ্যাল এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক প্রধান মারিয়া সেসিলা ফার্নান্দেজ-এস্তাভিলো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ব্যাংকের অন্য শাখা ও ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগামী কিছুদিনের মধ্যে চাকরিচ্যুতি থেকে সাময়িক বরখাস্তের মতো ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। তা করা হবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষ হলেই। ওদিকে নয় পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র তৈরি করেছে এএমএলসি। তাতে বলা হয়েছে, অর্থ পাচারের সব বিষয় এ মামলায় রয়েছে। এর মধ্যে সু ওয়েইকাং ও কিম ওং অর্থ নিয়েছেন। এএমএলসির তদন্তে দেখা গেছে যে, আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার শাখার মাধ্যমে সন্দেহজনক নামের ৪টি অ্যাকাউন্টে পাচার করা অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ২০১৫ সালের ১৫ মে।