ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা : অভিযোগের আঙুল ইসির দিকে

স্টাফ রিপোর্টার: স্থানীয় সরকারের প্রথম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, বুথ দখল, নানা অনিয়মসহ প্রাণহানির ঘটনার জন্য পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিকে আঙুল তুলেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইসির অদক্ষতা, নিয়ন্ত্রণহীনতা ও দুর্বলতার জন্যই সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আগে থেকেই যদি ইসি তৎপর হতো তাহলে এসব অঘটন ঘটত না।

গত মঙ্গলবারের নির্বাচনে সহিংসতার কারণে সাতক্ষীরার এসপি-ওসিসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তও করার জন্য ইসি নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে সহিংসতার জন্য তারা প্রকৃত দায়ী নয়। এজন্য কমিশনই দায়ী। বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনে যে কোনো দায়-দায়িত্ব নিতে হবে ইসিকে। কিন্তু ইসি নিজে দায়িত্ব না নিয়ে উল্টো পুলিশকে দায়ী করায় ইসির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যেসব ব্যবস্থা বা প্রস্তুতি নেয়ার কথা তা ইসি নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা নির্বাচনের আগে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বা সহিংসতা হতে পারে এমন সব তথ্য মাঠ থেকে সংগ্রহ না করায় এ ঘটনা বেশি করে ঘটেছে। তাছাড়া ইসি নিজে যে ব্যর্থ তা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। তিনি গত সোমবার বলেছেন, এ নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে তার দায়-দায়িত্ব পুলিশের। এ থেকে বোঝা যায় তারা কতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও দুর্বল। তিনি বলেন, ইসি যদি মনে করে ফিল্ড তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা হলে নির্বাচন বন্ধ করা উচিত ছিলো।

তিনি বলেন, নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ঘটেছে। অনেক প্রাণহানি হয়েছে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখান হয়েছে। অনেকে ভোট দিতে পারেননি। তাছাড়া ব্যালট বাক্স ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আগে থেকে প্রস্তুত না হলে এসব ঠেকান সম্ভব নয়। তাছাড়া নির্বাচনে কীভাবে এসব মোকাবেলা করতে হবে তা সংশ্লিষ্ট এসপি বা ওসিদের ঠিক মতো নির্দেশনা না দেয়ায় তারা হঠাৎ অঘটন প্রতিরোধে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তিনি বলেন, যদি পুলিশ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট তাহলে নির্বাচন কমিশন কেন আছে?

নির্বাচন কমিশন নির্বিকার ও ক্ষমতাহীন বলেই নির্বাচনে সহিংস ঘটনা ঘটেছে এমন মন্তব্য করেছেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এসপি-ওসির বিরুদ্ধে শাস্তি নয়, এই ইসির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ নির্বাচন কমিশনের ওপর আগে থেকেই মানুষের ভরসা নষ্ট হয়ে গেছে। এবার তারাই প্রমাণ করেছে তারা একেবারেই ব্যর্থ। তাই নির্বাচন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যে সক্ষমতা থাকা দরকার এ কমিশনের তা নেই। তা ছাড়া বর্তমান ইসি নিজেদের ব্যর্থতা ঠেকাতে এসপি-ওসিদের বরখাস্ত করছে। এটা হবে কেন। ইসি নিজেই যদি অক্ষম হয় তাহলে কোনো দিনই বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না।

তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে যারা মারা গেছে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী। তাই সরকারি দল সবচেয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়ছে। তা ছাড়া বিএনপি যদি কোমর ভাঙা দল না হতো তাহলে সহিংসতার মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যেতো।

বদিউল আলম আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যে কটি নির্বাচন পরিচালনা করেছে তার কোনোটিই সুষ্ঠু হয়নি। আর এসব গণ্ডগোল মারামারির মধ্যে মানুষ ভোট দিতে পারছে না। তারা ভোটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। এর ফলে দিনে দিনে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে আমাদের চাই একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন।

আবার নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে অভিহিত করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। তিনি বলেছেন, আসলে কোনোভাবেই ইসি শক্ত হতে পারছে না। আর সে কারণেই এখন সহিংসতার বা অনিয়মের দায় পুলিশের ওপর চাপাচ্ছে। তাই নির্বাচনের নামে কি যে হচ্ছে তা বলা মুশকিল।

তিনি আরো বলেন, কোনো একটি নির্বাচনের আগে কোন কোন কেন্দ্র কি ধরনের অনিয়ম হতে পারে তার আগাম আভাস নিতে সার্ভে করতে হয়ে। কিন্তু বর্তমান ইসি সে ক্ষেত্রে পুরোটাই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদের এজেন্সিগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। তাই নির্বাচন কমিশন আছে কি নেই তা বলাই মুশকিল। তিনি বলেন, এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী বা কর্মীদের ততোটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সে কারণে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তারা নিজেরাই গণ্ডগোল-মারামারি করে নিহত হচ্ছে। এ জন্য দলগুলোর রাজনৈতিক সংস্কৃতি আবারো ফিরিয়ে আনার তাগিদ দেন এ সাবেক নির্বাচন কমিশনার।