আলমডাঙ্গার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দীনকে সংবর্ধনা দিয়েছে ঢাকার ফুলকুঁড়ি থিয়েটার

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: পাকিস্তানি জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগকারী আলমডাঙ্গার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দীনকে অগ্নিসেনা হিসেবে সংবর্ধনা দিয়েছে ঢাকার ফুলকুঁড়ি থিয়েটার। ঢাকার সেগুন বাগিচার কাজী মোতাহার হোসেন সড়কের কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার অডিটরিয়ামে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফুলকুঁড়ি থিয়েটারের ২০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গুণীজন সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় তাকে জমকালো সংবর্ধনা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম ও ফুল কুঁড়ি থিয়েটারের চেয়ারম্যান এসএইচ শিবলীর সভাপতিত্বে ওই সংবর্ধনানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন- গণতন্ত্রী পার্টি সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শাহাদত হোসেন, আই সিডিএফ’র চেয়ারম্যান লায়ন ডা. আফরোজা বেগম হ্যাপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড সোহরাব আলী সানা, শেখ আব্দুল হালিম, শেখ আহমেদ হোসেন মির্জা, মেজর (অব.) হাবিবুর রহমান ও ফুলকুঁড়ি থিয়েটারের মহাসচিব এমএ এইচ মাসুদ।

১৯৭০ সালের মে মাস। দোর্দণ্ড প্রতাবশালী সামরিকজান্তা ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের রাষ্ট্র প্রধান। দেশে মার্শাল ল জারি করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা শহরে মিছিলের পুরোভাগে থেকে সকল রাস্তার দু পাশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা তোলার দায়িত্ব পালন করছিলেন কালিদাসপুরের মৃত গঞ্জের আলীর ছেলে মঈন উদ্দীন। মিছিল বর্তমান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছুলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া নজরুল ইসলামকে সাথে নিয়ে মঈন উদ্দীন ঢুকে পড়েন থানা চত্বরে। দাবি তোলেন পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি কালো পতাকা উড্ডীনের। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব মানতে রাজি হয় না পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম। পুলিশের সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে কিশোর মঈন উদ্দীন ঘটিয়ে ফেললেন এক অভাবনীয় ঘটনা। তিনি থানা চত্বরে উড্ডীন পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা দ্রুত নামিয়ে রাগে ক্ষোভে তাতে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেন। পতাকার দণ্ডে উড়িয়ে দেন আন্দোলনকারীদের কালো পতাকা। দূরে কাঁঠালগাছের নিচে অপেক্ষারত অন্যান্য সংগ্রামী সাথি চিকন-চাকন লম্বাটে এক কিশোরের এতোবড় স্পর্ধা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়। আতঙ্কে চোখ সরু করে দেখছিলেন তারা। স্তম্ভিত হয়ে পড়েন পুলিশ-প্রশাসনও। বয়ঃবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দীন আহমেদের এ স্পর্ধিত কাহিনি আলমডাঙ্গাবাসির মুখে মুখে। মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান কিংবদন্তীর মতো। অথচ তার এ অসামান্য অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি তিনি আজোবধি পাননি।

এলাকাবাসী দেশের মুক্তি সংগ্রামে তার অসাম্য অবদানকে স্বীকৃতি দিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসী তাকে অগ্নিসেনা উপাধি দিয়েছেন। আলমডাঙ্গা পৌরসভা কর্তৃক ২০১২ সালে তাকে অগ্নিসেনা হিসেবে স্বর্ণ পদকে ভূষিত করেছে।