কুষ্টিয়ার ১১ ইউনিয়নে একক প্রার্থী বাছাই আ.লীগ নেতাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়ন। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের স্থানীয় ৪ জন শীর্ষ নেতা। আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে আছেন তারা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, বর্তমান চেয়ারম্যান সদরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিয়াত আলী লালু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ৩ বারের নির্বাচিত মেম্বার মাজেদুর আলম বাচ্চু ও সদরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম।

৪ নেতাই মনে করছেন দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। দল থেকে একের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চাপ সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে নেতাদের। এচিত্র মিরপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে। দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য সব নেতা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। দলের নীতি নির্ধারক নেতারা কাকে রেখে কাকে মনোনয়ন দেবেন তা নিয়ে আগেভাগেই গলদঘর্ম হয়ে পড়েছেন।

প্রথম দফায় ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়েচড়ে বসেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের শীর্ষ নেতাদের অফিস ও বাড়িতে গিয়ে ধরনা দিচ্ছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ১১টি ইউনিয়নেই একের অধিক প্রার্থী আছে ক্ষমতাসীন দলে। কোনো কোনো ইউনিয়নে ৫ থেকে ৭জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী।

মিরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুটি ইউনিয়নে জাসদ, একটিতে বিএনপি ও একটিতে জামায়াতের নেতা চেয়ারম্যান।

উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা জানান, কেন্দ্রের নির্দেশনা আছে প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য যোগ্য একজন প্রার্থীর নাম মনোনয়নের জন্য পাঠাতে হবে। তবে এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকেই একের অধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই যার যার অবস্থানে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্ত অবস্থানে আছেন। তাই ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হচ্ছে। হুট করেই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নেতারা জানান, এক জনের নাম প্রস্তাব করে পাঠানোর কথা বলা হলেও সেটা সম্ভব হবে না। তাই একাধিক নাম পাঠানো হবে। কেন্দ্র একজনকে মনোনয়ন দেবে।

উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন জানান, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। উপজেলার শীর্ষ নেতারা বিষয়টি মনিটরিং করছেন। স্থানীয় যেসব আওয়ামী লীগের নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের তালিকা প্রস্তত করা হচ্ছে। তৃণমূলের মতামত নিয়ে এদের মধ্যে থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম সিলেক্ট করা হবে। তবে এ কাজে বেগ পেতে হচ্ছে।

উপজেলার আমলা, পোড়াদহ, মশান, আমবাড়িয়া, ছাতিয়ান, তালবাড়িয়া, বহুলবাড়িয়া, ফুলবাড়ীয়া, বারুইপাড়া, মালিহাদ ইউনিয়ন থেকে সৎ যোগ্য ও ইউনিয়নবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা প্রস্তত করা হয়েছে। তবে বর্তমানে যেসব দলীয় চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করছেন যে কোনো মূল্যে মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছেন। এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে একাধিক নেতার নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর যারা দলের নেতা-কর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন তাদের কপাল পুড়তে পারে। এছাড়া যেসব চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাট, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের বাদ দেয়া হবে।

আমলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি একলিমুর রেজা সাবান জোয়ার্দ্দার জানান, মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে ওয়ার্ডের নেতাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। ৯টি ওয়ার্ডের নেতারা যার নাম প্রস্তাব করবেন তাকেই চূড়ান্ত করা হবে। পরে উপজেলার নেতারা যাচাই বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করে ঢাকায় পাঠাবেন। তবে একজনের নাম চূড়ান্ত করা কঠিন কাজ।

মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম নীতি নির্ধারক কামারুল আরেফিন বলেন, যে কোনো মূল্যে একক প্রার্থী বাছাই করা তাদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে তৃণমূল নেতাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে। ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতাদের মতামত ছাড়া কোনো প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে না। যারা দলের জন্য নিবেদিত, সৎ ও যোগ্য এমন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে চেষ্টা করা হবে একজনের নাম সিলেক্ট করে কেন্দ্রে পাঠানো। সম্ভব না হলে একাধিক প্রার্থীর নাম পাঠানো হবে। আর কোনো নেতা যদি অর্থ নিয়ে কারো পক্ষ নেন সেক্ষেত্রে প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।