স্টাফ রিপোর্টার: মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টি বিতর্কের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়া প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস। এ বিষয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।
গতকাল মঙ্গলবার নেত্রকোনার রাজাকার মো. ওবায়দুল হক ওরফে আবু তাহের ও আতাউর রহমান ননীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই বক্তব্য আসে বলে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ত্রিশ লাখ শহীদের বিষয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, রায়ে সেই যুক্তি খণ্ডন করে দৃঢ়তার সাথে আদালত বলেছেন, ৩০ লাখ শহীদ নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কের অবকাশ নেই। এই ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানেই স্বাধীন বাংলাদেশ।
বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে, তাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে দু যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনাসভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে। ওই বক্তব্যে দেশদ্রোহী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ করে আদালতে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। ওই বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ঢাকার একটি আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনকে তলবও করেছে।
অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোন্দকার মাহবুব হোসেনের দাবি, খালেদার ওই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের সংজ্ঞায় পড়ে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনের দিকটি খতিয়ে না দেখে আবেগের বশে মামলার অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, এটি ভুল ধারণার ওপর করা হয়েছে এবং সরকারও আবেগের বশবর্তী হয়ে এই মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন আইনের বিধান মোতাবেক। এটি সঠিক হয় নয়। মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন দলের অন্য নেতারাও। খালেদার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে জরিপ করে সঠিক সংখ্যা নিরুপণের দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আর নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে সঠিক সংখ্যা নিয়ে তালিকা করবেন।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার পাকিস্তানপন্থী মনোভাবই তার ওই মন্তব্যের কারণ। শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় থাকলে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কীভাবে বিভিন্ন সময়ে দেয়া বাণীতে ৩০ লাখ সংখ্যাটি উল্লেখ করেছিলেন, সে প্রশ্নও ইতোমধ্যে উঠেছে। এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের বক্তব্য, পাক দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করতে বাঙালি জাতি ও মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন। এটি ঐতিহাসিক সত্য। যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। লাখ লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন। এক কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস নিঃসন্দেহে জাতির পবিত্র আবেগ ও মুক্তিযুদ্ধের অহংকারের সঙ্গে মিশে আছে।