দেশের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জীবনযাত্রা থমকে গেছে। তীব্র শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে বয়স্ক মানুষ আর শিশুরা। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদফতর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিলো দেশের মধ্যে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা। তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শিশু রোগীর ভিড় বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৫, সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ১, যশোরে সর্বোচ্চ ২২ দমমিক ২ সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৬, খুলনায় সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৮ , সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ২, দিনাজপুরে সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৮ সর্বনিম্ন ৮ দশমিক শূন্য, রংপুরে সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৮ সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫, ঈশ্বরর্দীতে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ২, সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৪, রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক শূন্য সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৮, শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৪, সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৪, সিলেটে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৭, সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৪, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৮ সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ২ ও ঢাকায় সর্বোচ্চ ২২ দশমিক শূন্য সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকালও ছিলো টেকনাফে ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শৈত্যপ্রবাহের কারণে নিউমোনিয়া, রোটাভাইরাস ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ বেড়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৩ শয্যার বিপরীতে ৫২ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। অতিরিক্ত রোগী সামলাতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম অবস্থা। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের ফলে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছে। শীতের কষ্টে প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। ভুক্তভোগীরা দাবী করেছেন, জীবন বাঁচাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস সাংবাদিকদের জানান, চলতি শীত মরসুমে সরকারিভাবে জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কার্যালয় থেকে ১১ হাজার ১৪৬টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তবে, বেসরকারি পর্যায়ে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, আগামী আরো দুইদিন এই ধরণের শৈতপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। চুয়াডাঙ্গায় এবারই এরকম শীত প্রথম নয়। এর আগেও শীতের প্রকোপ দেখা গেছে। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ২০০৩ সালের ২২ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস , ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি ৫ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি ৬ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিলো। সারাদেশে মাঘের শীতের সাথে যোগ হয়েছে শৈতপ্রবাহ। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস কাবু করে ফেলছে মানুষকে। এই শৈতপ্রবাহ আরও দুই থেকে তিন দিন চলবে। চলতি মাসের শেষ দিকে এই শৈত্যপ্রবাহ কমে তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুসারে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও সীতাকুণ্ডে এই শৈত্যপ্রবাহের দাপট সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা সবচেয়ে কম বলে জানা গেছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে চুয়াডাঙ্গার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতের তীব্রতা মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সাথে বেড়ে চলেছে শীতজনিত রোগ-বালাই। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীতের কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা দুর্ভোগে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার সন্ধানে বের হতে হচ্ছে তাদের। দিনের বেলাতেই অনেককে ছেঁড়া কাগজ ও পুরোনো কাপড়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গা পুরোনো বাজারের এক নৈশপ্রহরী বলেন, ‘বহুদিন পর অ্যারাম জাড় দ্যাকলাম। জাড় লাগলি নিজিই রোগী হয়ে যাবুনি।’ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। শিশু বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স মালেকা বেগম বলেন, ওই ওয়ার্ডে ১৩ শয্যার বিপরীতে ৫২টি শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এসব রোগীর বেশির ভাগই শীতজনিত নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ পর্যন্ত ছয় হাজার কম্বল বিলি করা হয়েছে। এছাড়া প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বেসরকারি উদ্যোগে হতদরিদ্রদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস জানান, বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিমাণ খুবই কম। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীদের শীতার্ত মানুষের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
মাঘের প্রথম সপ্তাহের বৃষ্টির পর শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় অনেকটা জবুথবু দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তবে এ বছরের মতো শীতের দাপট শেষ হতে চলেছে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে। অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে আর মাত্র এক দিন তারপর কমে আসবে কনকনে শীতও। গত কয়েকদিন শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় যান চলাচলে বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক এলাকায় শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হয়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে। পূর্বাভাস কর্মকর্তা কুদ্দুস বলেন, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও সীতাকুণ্ড অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঘন কুয়াশায় কারণে রোববার সকালে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হয়। আড়াই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল ১০টায় ঢাকার সাথে দক্ষিণ জনপদে সড়ক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ ফেরি ঘাট শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দিতে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, তীব্র্র শীতে জীবননগরে এক বৃদ্ধার মুত্যু হয়েছে। উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের হালিমা খাতুন (৯০) শনিবার রাতে শীতজনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জনায়, চলতি শীত মরসুমে গতকালই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কনকনে ঠাণ্ডা আর তীব্র হাঁড় কাপানো শীতে জীবননগর উপজেলার জীবন যাত্রা বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কবলে পড়ে মানুষ ও পশু-পাখি কাহিল হয়ে পড়েছে। গত ৬ দিন এখানে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।
গত ৬ দিন ধরে সন্ধ্যা নামতে না নামতে ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ছে এ উপজেলা। সেই সাথে তীব্র হচ্ছে শীতের প্রকোপ। এর ফলে দুর্ভোগ দুর্দশা বাড়ছে ছিন্নমূল ও দরিদ্র অসহায় মানুষ। কষ্টে পড়েছে বৃদ্ধ, শিশু, হতদরিদ্র মানুষ ও দিনমজুর। শীতের কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কনকনে শীতে সন্ধ্যায় বাজার-ঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে। এলাকার ছিন্নমূল মানুষেরা শীত থেকে রক্ষা পাবার জন্য খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাজারের পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্র কেনার জন্য নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমুল মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া গত কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে রবি ফসলসহ বোরো বীজতলায় নানা রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়লেও ছিন্নমূল মানুষের জন্য কিছু সংস্থা শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি ভাবে এ উপজেলায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি।
ঝিনাইদহে প্রতিবন্ধী ,গরীব,অসহায় ও সুস্থদের মাঝে চাদর, কোম্বল ও ফল বিতরন করলেন স্থানীয় নিউ শেল্টার নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।এ উপলক্ষে রোববার দুপুরে শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের প্রধান কার্যলয়ে এক শত প্রতিবন্ধী,গরীব অসহায় ও সুস্থদের মাঝে এ সব কোম্বল বিতরণ করেন জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক ডা. জাহিদ আহমেদ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক রোমেনা বেগম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিখি ছিলেন ফয়সাল আহমেদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেল্টার সমাজ কল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টা ইয়াছিন আলী, প্রকল্প সমন্বয়কারী আরিফ হোসেন, সমন্বয়কারী পলাশ সাহা, সাবেরা বেগম ঝর্ণা ও সুলতানা পারভীন ।