স্টাফ রিপোর্টর: অনেক সময় টাকার কাছে মাতৃত্ব হার মানে। এমনই ঘটনা ঘটেছে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে। মাত্র ২০ হাজার টাকার লোভে নিজের বুকের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়ে বাচ্চা চুরির নাটক সাজিয়েছেন মুহছেনা আক্তার নামে এক নারী। তিনি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মোহাম্মদ সেলিম নামে এক ব্যক্তির কাছে ৭ মাসের ছেলে মেহেদী হাসানকে বিক্রি করে দেন। মুরছেনা একই উপজেলার মধ্যম শিলুয়া গ্রামের চা দোকানের কর্মচারী জসিম উদ্দিনের স্ত্রী।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাগলনাইয়া ও ফেনী মডেল থানা পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় ছাগলনাইয়ার ভ‚ইয়ার দিঘী এলাকা থেকে সেলিম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। গত সোমবার দুপুরে ফেনী ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শিশুটি চুরি হয় বলে অভিযোগ করেন মুহছেনা আক্তার। ফেনী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হক পিপিএম এ সকল তথ্য জানান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সামছুল হক, সহকারী পুলিশ সুপার শাহরিয়ার আলম, ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহবুব মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, সেলিম জানিয়েছেন তার চার মেয়ে, তাই ছেলে না থাকায় তিনি কোনো শিশুপুত্রকে দত্তক নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনাক্রমে জসিম নামে এক চা দোকানের কর্মচারী ও তার স্ত্রী মুরছেনা বেগমের সাথে সেলিমের পরিচয় হয়। সেলিমের ছেলে না থাকার আক্ষেপের কথা শুনে মুরছেনা নিজ সন্তানকে দত্তক হিসেবে সেলিমকে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। মুরছেনার আরো এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সংসারে তার অভাব-অনটনও রয়েছে। মুরছেনা মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে সেলিমের কোলে শিশু মেহেদীকে তুলে নেন। এ সময় মুরছেনা তাকে অনুরোধ করেন, মেহেদীকে দত্তকের বিষয়টি তার স্বামীকে যেন না জানানো হয়, তিনি স্বামীকে জানাবেন হাসপাতাল থেকে ছেলে চুরি হয়ে গেছে।
তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মা মুরছেনা বেগম অন্যান্য ঘটনা স্বীকার করলেও ছেলেকে বিক্রি করেননি বলে দাবি করেছেন। মুহছেনা আক্তার জানান, বাচ্চাটি তিনি লালন পালন করার জন্য সেলিমের কাছে দেয়। বাচ্চা চুরি হওয়া এই নাটকের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সেলিম তাকে শিখিয়ে দিয়েছিলো যে বাচ্চা চুরি হয়েছে। মেহেদীর বাবা জসিম উদ্দিন জানান, দত্তকের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। পুলিশ বাচ্চাটি উদ্ধার করে দেয়ায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। মোহাম্মদ সেলিম জানান, তার চারটি মেয়ে। তার একটা ছেলে সন্তানের ইচ্ছা ছিলো। তাই সে বাচ্চাটি দত্তক নিয়েছিলো।
ফেনী পুলিশ সুপার রেজাউল হক পিপিএম বলেন, জেলা সদর হাসপাতালে বাচ্চাটির বিষয়ে সন্দেহ হলে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাচ্চাটি উদ্ধার করা হয়। বাচ্চাটি চুরি হয়নি, তাকে তার মা মুরছেনা আক্তার ছাগলনাইয়ার সেলিম নামে একজনের কাছে দত্তক দেয়। পরিবারকে বুঝানোর জন্য সেলিমের শিখানো নাটকটি সে হাসপাতালে করেছে।